শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : লিচু গাছে মুকুলের পরিবর্তে তামাটে রঙের কচি পাতা। ফ্লাওয়ারিং এর পরিবর্তে ফ্লাশিং। এ পরিস্থিতিতে হতাশ লিচুর জেলা দিনাজপুরের বাগান মালিক ও মৌসুমি লিচু ফল ব্যবসায়ীরা। 

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ অও কৃষিবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তের প্রভাব পড়েছে দিনাজপুরের লিচু বাগানে। ফ্লায়ারিং এর পরিবর্তে ফ্লাশিং হয়েছে গাছগুলোতে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.নুরুজ্জামান জানান, 'জেলায় ছোট-বড় নিয়ে ৩১২৮টির বেশি লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার গাছ ।লিচুর জন্যে বিখ্যাত এজেলায় প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে লিচু চাষের জমির পরিমাণ। দেশব্যাপী দিনাজপুরের লিচুর কদরও রয়েছে আলাদা। বেদানা, চায়না থ্রি,চায়না টু, বোম্বাই,মাদ্রাজি,হাড়িয়া ও কাঁঠালী লিচু চায় হয় এজেলায়।'

প্রকৃতির রসগোল্লা খ্যাত এজেলার সুস্বাদু লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। কিন্তু এবার লিচু ফলের বিপর্যয়ের আশংকা করছে বাগান মালিক, কৃষিবিদ ও উদ্ভিদবিদসহ অনেকেই। তাদের মতে, এবার লিচু ফলন বিপর্যয়ের আশংকাই রয়েছে বেশি।কারণ,লিচু গাছে মুকুলের পরিবর্তে তামাটে রঙের কচি পাতা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ জানান, গতবছর অক্টোবর মাসে অসময়ে বৃষ্টিপাতে ক্ষতি হয়েছে। মাটিতে পর্যাপ্ত খাদ্য, বেশি রস থাকলে ফ্লাওয়ারিং না হয়ে ফ্লাশিং হয়। আর ফ্লাশিং হলে ফ্লাওয়ারিং হবে না কখনোই। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশংকাই থাকে বেশি।

তিনি আরো বলেন, মাঘ মাসের শুরু থেকে লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। ফাল্গুনের মাঝামাঝি বাগানগুলোতে লিচুর মুকুল থেকে কুঁড়ি আসা শুরু হয়। আর চৈত্রের শুরুতে কুঁড়ি থেকে ফুটবে গুটি লিচু। সবুজ গুটি থেকে থোকা থোকা বৈশাখের মাঝামাঝি টকটকে লাল রঙে রাঙাবে। জ্যৈষ্ঠ মধুমাসে গাছগুলোতে ঝুলে থাকবে থোকায় থোকায় লিচু।
কিন্তু এবার যেহেতু আগেই ফ্লাশিং হয়েছে,তাই ফ্লাওয়ারিং সম্ভাবনা খুবই কম।'

দিনাজপুরের লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত বিরল উপজেলার মাধববাটী। এই গ্রামের চারিদিকে যেখানেই চোখ যায় শুধু লিচুর বাগান। লিচু গাছ এসময় মুকুলে আসার কথা। কিন্তু গাছগুলো ভরে আছে লালচে ও তামাটে রঙের কচি পাতায়।
লিচু বাগান মালিক মতিউর রহমান জানালেন, 'বিরূপ আবহাওয়ার কারনে মুকুলের পরিবর্তে গাছে নতুন পাতা বের হচ্ছে। একারণে দূরদূরান্ত থেকে বাগান কিনতে আসা ব্যবসায়ীরা লিচু গাছের এই অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।'

উদ্ভিদবিদ মোসাদ্দেক হোসেন জানালেন, লিচু চাষীদের জন‌্য বিষয়‌টি দুঃসংবাদ। দিনাজপুরে লিচু গাছে নতুন মুকুলের প‌রিবর্তে নতুন পাতা। এটি আসলে জলবায়ু প‌রিবর্তনের প্রভাব সুস্পষ্ট। পুষ্প দন্ড বা মঞ্জ‌রি দন্ড ক‌চি পাতা থে‌কে উ‌দিত হওয়ার সক্ষমতা থাকেনা। ক‌চি পাতা বের হওয়ার জন‌্য দায়ী অসময়ে বৃষ্টিপাত। বায়ুপ্রবাহ ও গ্রীষ্ম/শী‌তের মিশ্রণ। তাপমাত্রার তারত‌ম্যের তারতম্য উদ্ভিদের বায়োক্লোক বা জৈব ঘড়ি ব্যহত হয়। উদ্ভিদের স্বাভাবিক শরীর বৃত্তিয় ক্রিয়ায় প্রভাবিত হওয়ায় পুস্প মঞ্জুরি দন্ড বেরুতে পারেনা।এ সময় উদ্ভিদ নতুন পাতা গজিয়ে ফেলে। নতুন পাতা বেরুলে আর ফুল আসেনা।লিচু চাষী‌দের জন‌্য বিষয়‌টি দুসংবাদ।'

এদিকে দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান জানান, গতবছর ২০২২ অক্টোবরে জেলায় ৭০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০২৩)