স্টাফ রিপোর্টার : একটি জিনিসের দাম বাজারে যা, তার চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি দাম কোনোভাবেই হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরে আদালত এ কথা বলেছেন।

হাইকোর্ট বলেন, ‘সরকার তো কোনো খাতেই টাকা কম দেয় না। একটি জিনিসের দাম বাজারের তুলনায় ৪০০ গুণ বেশি হতে পারে না। বিদেশিরা তো দেশ চালান না। আমরা নিজেরাই দেশ চালাচ্ছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে এসব কথা বলেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ কথা বলেন।

এসময় আদালত বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। দুর্নীতি যদি সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব না হয়, তাহলে দেশ টিকবে না।’

একপর্যায়ে হাইকোর্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে ডায়াসের সামনে ডাকেন। তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এ দেশের মানুষ কিন্তু গরিব। বিপদে পড়লেই ডাক্তারের কাছে যান। এটা একটা মহান পেশা। ডাক্তাররাও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেবা দেন। তাদের ব্যক্তিজীবন আছে বলে মনে হয় না। তারপরও মানুষ সেবা পান না। আপনি বিষয়টি দেখবেন। গরিব দেশ হিসেবে যথেষ্ট টাকা স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেয় সরকার। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে কোনো কিছু গেলে আপনারা গুরুত্ব দেবেন।’

কারাগারে থাকা বন্দিরাও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন বলেও জানান হাইকোর্ট। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে আদালত বলেন, ‘কারাগারে থাকা মানুষদেরও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার আছে। সেবাটা দেওয়া দরকার। আমাদের তো কাউকে ডাকতে মন ইচ্ছে করে না। এটা শোভনীয়ও নয়। আমরা অনেক সময় দিয়ে থাকি। বার বার সময় দেওয়ার পরও যখন আদালতের আদেশ মানা হয় না, তখন আমরা বাধ্য হয়ে ডাকি।’

এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এটা একটু কনসিডার করেন। স্বাস্থ্যখাতের বিষয়টি করোনাভাইরাসের কারণে হয়েছে। সব জায়গায় এখন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আদালতকে বলেন, অনিইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। এরকম ভুল আর হবে না। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

পরে আদালত এ মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২ মে দিন ধার্য করেন।

এর আগে সকালে দেশের কারাগারগুলোতে শূন্যপদে ৪৮ জন চিকিৎসক নিয়োগের নির্দেশনা নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন না করায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

গত ১৭ জানুয়ারি দেশের কারাগারগুলোতে শূন্যপদে ৪৮ জন চিকিৎসক নিয়োগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় তার ব্যাখ্যা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ২৪ জানুয়ারি তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর দেশের কারাগারগুলোতে শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও কারা কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

অ্যাডভোকেট মো. জে আর খান রবিন ওইদিন বলেছিলেন, কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছেন, কারাগারগুলোতে ৯৩ জন চিকিৎসক নিয়োগ ও সংযুক্ত করা হয়েছে। ৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে। শূন্যপদে নিয়োগের জন্য সময় প্রয়োজন। পরে আদালত ৮ জানুয়ারির মধ্যে শূন্যপদে নিয়োগের নির্দেশ দেন।

গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দিয়ে জানানো হয়, দেশের ৬৮টি কারাগারে ১১২ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৪১টি পদের মধ্যে ১১২ পদে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি থাকা শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দেন আদালত।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২৪, ২০২৩)