প্রসেনজিৎ বিশ্বাস


সারা বছর ধরে সকলে অপেক্ষা করে থাকেন সরস্বতী পূজার জন্য। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্যে সরস্বতী পূজা খুবই স্পেশাল। সকাল থেকেই উপোস থেকে বাকদেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেন তারা। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের দেবী হিসেবে পরিচিত মা সরস্বতী। মূলত মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমীতে বাঙালিরা সরস্বতী পূজা  করে থাকেন।

সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে মা সরস্বতীর অবতারণা হয়েছিলেন। তাই প্রতি বছর মাঘ শুক্লা মাসের পঞ্চমীতে, বসন্ত পঞ্চমীর উৎসব পালিত হয়। পুরাণ মতে, এই দিনে মা সরস্বতীর আরাধনা করলে মা লক্ষ্মী ও দেবী কালী উভয়ের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। ২৬ জানুয়ারি বাংলায় ১১ মাঘ, বৃহস্পতিবার সরস্বতী পূজা। এ দিনটিতে বাংলাদেশ সরকারের থাকে ছুটি ঘোষণা তাই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে বাণী অর্চনা।

এ দিনটি উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে নগরকান্দা উপজেলার পৌর সভা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হার্টগুলোতে মা সরস্বতীর বিগ্রহ বা ওমা, পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন পাল সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বিক্রেতারা যা বিক্রয় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এ পুজোয় প্রণাম মন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল-লোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে। জয় জয় দেবী চরাচরসারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে।

সাধারণত নিয়ম অনুসারে পুজো হলেও বেশ কয়েকটি সামগ্রির প্রয়োজন হয়। যেমন- আমের মুকুল, অভ্র- আবির, দোয়াত- খাগের কলম, পলাশ ফুল, বই ও বাদ্যযন্ত্রাদি। এছাড়াও বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল ও মালা প্রয়োজন হয়।

প্রচলিত লোকাচার অনুযায়ী, সরস্বতী পূজা সম্পন্ন হওয়ার আগে পর্যন্ত কুল খেতে নেই। যদিও এর পেছনে রয়েছে আরও অনেক ব্যাখ্যা। তবে স্কুল- কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাগদেবীর আরাধনার করার পরে অঞ্জলি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কুল খাওয়ার রীতি বহুদিন ধরে।

জনশ্রুতি আছে যে যদি আপনার সন্তানের কথা পরিষ্কার না হয়, তাহলে বসন্ত পঞ্চমীর দিন, একটি রুপোর সূচ দিয়ে তার জিভে ওমের আকৃতি আঁকুন। এর ফলে বামী দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, মা সরস্বতীর বীণার মধুর ধ্বনিতে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী বাক লাভ করেছিল।

যদি আপনার সন্তানের পড়াশোনায় ভাল না লাগে, তাহলে বসন্ত পঞ্চমীর দিন, আপনার সন্তান কে বলুন, মা সরস্বতীকে একটি হলুদ রঙের ফুল এবং সবুজ রঙের ফল অর্পণ করতে। এ পুজোর সময় জাফরান এবং হলুদ চন্দন এই জিনিসগুলি নিবেদন করলে বুদ্ধির বিকাশ হয়।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী।