আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অভিবাসন সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করেছে ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অনিয়মিত অভিবাসীদের ‘ডিপোর্ট’, আশ্রয় আবেদনের রেকর্ড সংখ্যার পাশাপাশি ২০২২ সালে ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতা পাওয়ার হারও বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) অভিবাসন সংক্রান্ত প্রাথমিক পরিসংখ্যানের তথ্য প্রকাশ করেছে ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালে আশ্রয় আবেদনের জন্য ফরাসি প্রেফেকচুরগুলোতে স্থাপিত ওয়ান স্টপ বুথে ১ লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি প্রথম আশ্রয়ের আবেদন নিবন্ধিত হয়েছিল।

যা ২০২১ সালের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। এই সংখ্যাটি কোভিড-১৯ মহামারির আগের পরিস্থিতি অর্থ্যাৎ ২০১৯ সালের পরিসংখ্যানের কাছাকাছি। ২০১৯ সালে এক লাখ ৩৮ হাজার ৪২০ প্রথম আশ্রয় আবেদন নথিভুক্ত করা হয়েছিল।

তবে প্রথম আশ্রয় আবেদন, পুনঃআবেদন, অপ্রাপ্তবয়স্ক, ডাবলিনভুক্ত আশ্রয় আবেদনসহ ২০২২ সালে রেকর্ড এক লাখ ৫৬ হাজার ১০৩টি আশ্রয় আবেদন নিবন্ধিত হয়েছে। এই সংখ্যাটি ২০১৯ সালে ছিল এক লাখ ৫১ হাজার ২৮৩।

প্রথমবারের মতো আশ্রয় আবেদন করা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষে আছে আফগান নাগরিকরা। দেশটির আশ্রয়প্রার্থীরা ২২ হাজার ৫৭০টি আবেদন দায়ের করেছেন। সংখ্যার বিচারে তালিকার পরবর্তী শীর্ষ দেশগুলো হলো ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ, তুরস্ক, জর্জিয়া এবং কঙ্গো থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা।

বাংলাদেশিরা ১০ হাজার ৫৫৪টি আশ্রয় আবেদন করেন। যার মধ্যে আট হাজার ৬০০টি আশ্রয় আবেদন প্রথমবারের মতো নথিভুক্ত করা করা হয়েছে।

২০২২ সালে ৬৫ হাজার ৮৩৩ জন ইউক্রেনীয় ফ্রান্সে অস্থারী সুরক্ষার সুবিধা নিয়েছেন। তবে এই সংখ্যায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা অন্তর্ভুক্ত নয়।

অভিবাসন ও ইন্টিগ্রেশন বিষয়ক ফরাসি দপ্তর অফির মহাপরিচালক দিদিয়ের লেসচি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, যদি আমরা ইউক্রেনীয়দের (আশ্রয় আবেদনে) যোগ করি, তাহলে এটি ফ্রান্সে অভিবাসনের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন সংখ্যা হবে।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী সংখ্যার সত্ত্বেও ফ্রান্সের আশ্রয় কাঠামোর জরুরি আবাসন ব্যবস্থা সংকটে পড়েনি। কারণ বাস্তুচ্যুত ইউক্রেনীয়দের প্রথাগত জাতীয় অভ্যর্থনা ব্যবস্থায় রাখা হয়নি।

২০২২ সালে ফরাসি ভূখণ্ড ত্যাগের নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিদের নিজ দেশে ডিপোর্ট করার ক্ষেত্রেও রেকর্ড ঘটেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, ২০২২ সালে ১৫,৩৯৬ জন বিদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যা ২০২১ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি, কিন্তু ২০১৯-এর তুলনায় কম। ২০১৯ সালে ২৩,৭৪৬ জনকে ডিপোর্ট করা হয়েছিল।

টুইটারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা বলেন, নির্দেশানুসারে অপরাধী বিদেশিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালে তিন হাজার ৬১৫ জন বিদেশি অপরাধীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০২১ সালে এই সংখ্যাটি ছিল এক হাজার ৮৩৪। অর্থাৎ দ্বিগুণ বেশি।

২০২২ সালে চাকরিসহ বিভিন্ন বিশেষ নিয়মিতকরণের পদ্ধতিতে ৩৪ হাজার ২৯ জন অভিবাসী বৈধতা পেয়েছেন। যা আগের বছরের তুলনায় আট শতাংশ বেশি।

তবে ‘সার্কুলার ভালস’ বা নির্দিষ্ট সময় চুক্তির বিনিময়ে কাজ করে বৈধতা পাওয়ার হার ২৯.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলি ফরাসি সংসদে ক্ষমতাসীন দল এবং ডানপন্থি বিরোধী দল লে রিপাবলিকান বা এলআর দলের মধ্যে বিতর্ক তৈরি করবে।

কারণ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় আসন্ন অভিবাসন বিল সংসদে পাস করতে বিরোধী লে রিপাবলিকান দলের এমপিদের সহায়তা প্রয়োজন হবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁর জোটের।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নতুন অভিবাসন বিল মন্ত্রী পরিষদে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই বিলটি আগামী মার্চ মাসে ফরাসি সিনেটে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

নতুন আইনের সর্বোপরি লক্ষ্য হল জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপিত হওয়া বিদেশিদের বহিষ্কার সহজতর করা। পশাপাশি নতুন আইনে ভাষা এবং কাজের মাধ্যমে ফরাসি সমাজে ইন্টিগ্রেশনের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২৯, ২০২৩)