জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে হাফেজ মনির আহমদ সড়ক খুঁড়ে রেখে ঠিকাদার উধাও হয়ে গেছেন। সড়কটি ইছানগর ও খোয়াজনগর গ্রামকে সংযুক্ত করার একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে জানা যায়।  মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটি খুঁড়ে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছেন।

স্থানীয় এলজিইডি অফিসের উদাসীনতায় সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ফলে, সংস্কার কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারের লোকজন উধাও হয়ে গেছে। তারা সড়কটি খুঁড়ে কিছু অংশে কাজ করেছেন। এরপর আর দেখা নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক খুঁড়ে রাখায় পুরো সড়কটি এখন ধুলো-বালিতে পরিণত হয়েছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন জানান, সড়ক বেহাল হওয়ায় চিকিৎসার জন্য রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতেও অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। সড়কের এই অবস্থার কারণে এলাকার লোকজনকে অন্য সড়ক দিয়ে ঘুরে আসতে হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আইআরআইডিপি-৩ প্রকল্পের অধীনে এস আলম সুগার মিল থেকে খোয়াজনগর হাফেজ মনির উদ্দিন পর্যন্ত ১০০৮ মিটার সড়কে কালভার্টসহ পাকাকরণের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়।

ওই দরপত্রে সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা হিসেবে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬৮ টাকায় কাজ পায় চট্টগ্রাম নগরীর মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছেন না। এলজিইডি চিঠি দিয়েও হাজির করাতে পারছেন না তাদের। সর্বশেষ গত বছরের ১৬ আগস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বুঝে নিলেও পরে কাজ ফেলে উধাও হয়ে যায়।

সূত্রে জানা যায়, হাফেজ মনির আহমদ সড়কটি খোয়াজনগর ও ইছানগর এলাকাকে সংযুক্ত করেছে। যাতায়াতের জন্য এটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কার্যাদেশ পেয়েই মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ সড়কটি খুঁড়ে ফেলে। পরে সড়কের পাশে বালু তুলে রাখে। পরবর্তীতে নতুন করে আর কোনো কাজ তারা করেনি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

খোয়াজনগর গ্রামের বাদশা বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে চরলক্ষ্যা, জুলধা, খোয়াজনগরের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। তার মধ্যে বিন হাবিব গ্যাস কোম্পানী ও প্যারাগন ব্রিকস ফিল্ডের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানানো হলেও কাজ করছেন না।’

এর মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা কাজ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে নিপা এন্টারপ্রাইজকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, প্রথম চিঠি পাওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কোনো কাজ করেনি। পরে চুক্তি বাতিলের পত্র দেওয়া হয়। এখন বলছেন তারা কাজ করবেন। কিন্তু কাজের লক্ষণ নেই।

স্থানীয়রা বলেছেন, কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছাকৃত ভাবে কাজটি বন্ধ রেখেছেন। যা চুক্তির পরিপন্থি বলেও চিঠিতে জানান উপজেলা প্রকৌশলী।

কর্ণফুলী এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘কাজ বাস্তবায়নের জন্য নিপা এন্টারপ্রাইজকে চিঠি পাঠিয়েছি। এখন তারা জানিয়েছেন কাজ করবেন। যেহেতু তাঁদের কার্যাদেশ সময় এখনো রয়েছে।’ অথচ উক্ত প্রকৌশলীই কাজের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়েছে বলে ইতিপূর্বে কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছেন। যা প্রতিবেদকের রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিষয়টি আমলে নেয়নি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মোহাম্মদ ইসমাইলের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, ‘কর্ণফুলী উপজেলার হাফেজ মনির আহমদ সড়কটির বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। যাতে দ্রুত কাজটি শেষ করেন ঠিকাদার। তথ্যটি জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ৩০, ২০১৩)