স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর কাজ ৫৫ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। সেতুটি করার জন্য ছয় দশমিক দুই কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ নির্মাণ করা হবে। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে চার দশমিক আট কিলোমিটার। এরই মধ্যে রেলসেতুর ছয়টি স্প্যানের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৪৪ স্প্যানের কাজ চলমান। সেতুটির মোট পিয়ারের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে ২০টির কাজ শতভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি ৩০টির কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বঙ্গবন্ধু রেলসেতু সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ২৩টি জেলার সঙ্গে রেল চলাচল সহজ করার এ প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সেতুর এক পাশে টাঙ্গাইল ও অন্য পাশে সিরাজগঞ্জ। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর তিনশ মিটার উজানে হবে নতুন এ সেতুর অবস্থান। বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে এখন ঝুঁকিপূর্ণভাবে ট্রেন চলাচল করছে। সেতুতে বেশ কয়েক দফায় ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেন ধীরগতিতে চালানো হয়। সেতুতে অপরিকল্পিতভাবে রেলপথ যুক্ত করায় এটি মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন অবস্থায় যমুনা নদীতে বিদ্যমান সেতুর সমান্তরাল পৃথক একটি রেলসেতু স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, যমুনা রেলওয়ে সেতুর মোট পিয়ারের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে ২০টির কাজ শতভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি ৩০টির কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে আছে, কিছু পিয়ারের কাজ চলমান, কিছুর আবার চলছে ঢালাইয়ের কাজ। স্টিল স্ট্রাকচারের সব কাঁচামাল জাপানের। এগুলো ভিয়েতনামে ফেব্রিকেশন করে দেশে স্টলেশনের কাজ চলমান। প্রকল্পের অগ্রগতিও ভালো বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। বৈশ্বিক কোনো সংকটে প্রকল্পের কাজে সমস্যা হয়নি। কারণ বৈদেশিক ঋণে প্রকল্পটির কাজ চলমান। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলমান রেল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পারাপারের সময় গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ব্রডগেজ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ৪৮টি রেল বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু ব্যবহার করে চলাচল করলেও ২০২৪ সালের পর যখন স্বতন্ত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতুর উদ্বোধন করা হবে তখন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানী ঢাকায় সহজে পণ্য পরিবহন করা যাবে।

মাসউদুর রহমান বলেন, এ মেগা প্রকল্পে এখন তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। সব কাজ সঠিকভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে। এ প্রকল্পে জাইকা জাপানি মুদ্রা ইয়ানের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে। সেজন্য চলমান ডলারের কোনো সংকট পড়বে না বা এখনই ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় নয় হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেশের বৃহত্তর এ রেলসেতু নির্মাণে সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণ ব্যয় সাত হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় চার দশমিক ৮০ কিলোমিটার এই রেলসেতুর দুইপাশে শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, সাত দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে।

একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলসেতুর পাশাপাশি প্রকল্পের অধীনে তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলসেতুর পূর্বপ্রান্তে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে সে দেশের সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প অনুমোদনের পর ২০১৭ সালের মার্চে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষ হয়। দুই অংশের জন্য ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি সই হয়। বর্তমান প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। স্টিল অবকাঠামোয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মোট অবকাঠামো ব্যয় ১৩ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার কোটি খরচ হয়েছে। তবে পরামর্শক ও ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৬ কোটি ৭৮০ টাকা। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলওয়ে সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চালানোর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের এক বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ৩১, ২০২৩