| মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর |

বই প্রকাশ করা এখন ছেলেখেলা। বই বলতে এখানে মূলতঃ সাহিত্য-সংস্কৃতির আওতাধীন সৃজনশীল এবং মননশীর বইকেই বোঝাচ্ছি। এক সময় বই প্রকাশ ছিলো রীতিমত যজ্ঞ। লিখো, সম্পাদনা করো, পান্ডুলিপি তৈরী করো, প্রতিষ্ঠিত লেখক না হলে প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে ঘুরো। আপনি নবীন লেখক হলে প্রকাশক পান্ডুলিপি রেখে দিয়ে গম্ভীর মুখে বলতেন, "রেখে যান লেখাটি, মাস ছয়েক পরে জানাবো।" বটতলা প্রকাশিনী না হলে পান্ডুলিপিটা চলে যেত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ঝানু পন্ডিতের কাছে রিভিউ করতে। রিভিউয়ের ফলাফলের উপরই নির্ভর করতো আপনার বইটি আলোর মুখ দেখবে কিংবা দেখবে না।
বইটি প্রকাশনার যোগ্য হলে লেখককে খবর দিতেন প্রকাশক এবং রয়েলটি বিষয়ে চুক্তিনামায় আবদ্ধ হতেন দু'পক্ষ। উল্লেখ্য বই প্রকাশের যাবতীয় খরচ, বই বিপণণের যাবতীয় দায়িত্ব ছিল প্রকাশকেরই।
এখন কি হচ্ছে? আপনার একটু আধটু লেখার বাতিক আছে। সাহিত্য অঙ্গনে কল্কে পাওয়ার জন্য আপনার একটা বই প্রকাশ করা খুবই জরুরী। এছাড়া লিখছেন কিন্তু আপনার কোন প্রকাশিত বই নেই! ছিঃ, সামাজিক মর্যাদা বলেও তো একটা কথা আছে !! তাই আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন বই প্রকাশের। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই ...
আপনার এ সিদ্ধান্ত চাউর হতেই প্রকাশকরাই আসবে আপনার দ্বারে- কতো ফর্মার বই, কতো খরচ পড়বে যাবতীয় হিসেব নিয়ে । বলা বাহুল্য আপনার ট্যাক থেকেই নেয়া হবে খরচের পুরো টাকা এবং সম্ভব হলে পুরোটাই অগ্রীমে। শুধু যে খরচ তাই নয়, লভ্যাংশটাও বই বিক্রির আগেই পেয়ে যায় প্রকাশক। প্রকাশক তো আর অগা নয় যে সে বুঝতে পারবে না বইটি মার্কেটে কাটবে নাকি পোকায় কাটবে। তাছাড়া অধিকাংশ প্রকাশক আজকাল আর বইয়ের বিপণণের ঝামেলায় যেতে চায় না। আপনিই পান্ডুলিপি গুছিয়ে দিচ্ছেন সফট কপিতে। লেখা রিভিউয়ের কোন বালাই নেই। এমন কি ঝানু প্রুফ রিডারেরও প্রয়োজন নেই। একঝলক দেখে নিয়ে ছেপে দিলেই হলো। অতএব মাভৈ!
স্বল্পতম সময়ে আপনি পেয়ে গেলেন আপনার বই। হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলেন। বই না যেন আনকোরা বউ! আহা, নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকতেও কত মজা !!
তবে পাঠক হিসেবে আমরা কি পাই, সে কথা নাই বা বল্লাম। তা ছাড়া, প্রকাশকদের কমন বুলি, "আমাদের খরচে বই প্রকাশ করবো! বই পড়ার পাঠক কোথায়?"
সত্যি কথাই বলেন প্রকাশক। বেশীরভাগ বইয়ের উপর থেকে পাঠকদের ভক্তি উঠে গেছে। তা কি শুধুই অকারণে!
খড়ের গাঁদায় সুই খোঁজার মতোর পাঠককে খুঁজে নিতে হয় একখানি ভালো বই।