কাজী নজরুল ইসলাম : শরীয়তপুর জেলার প্রধান ডাকঘর এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। মাত্র ১৫টি গাব গাছের খুটির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি এই দ্বিতল ভবনটি। তার ভিতর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা প্রদান করছে সংশ্লিষ্টরা।

ভবনে ভয়াবহ ফাটল ধরেছে। ছাদের আস্তর, কলাম, গ্রেট ভিমের রড ও পিলারে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে মারাত্মক রকমের। উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লেখালেখি করার পরেও ভবনটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা না করার ফলে প্রতিদিন জীবনের ঝুকি ও আতঙ্ক নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের।

ডাকঘর কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ডাক অধিদপ্তরের প্রকৌশল বিভাগ নির্মান করেছিল দেড় তলা বিশিষ্ট শরীয়তপুর জেলা প্রধান ডাকঘর ভবনটি। নিন্ম মানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে ঠিকাদার এ গুরুত্বপূর্ণ ভবন নির্মান করায় এত অল্প সময়ের ব্যবধানেই ভবনে ফাটল ও ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৮/১০ বছর আগে থেকে ভবনটি ঝুকিপূর্ন হওয়ার পরেও এর উপর দ্বিতীয় তলা নির্মান করা হয় ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে। ফলে ভবনের প্রতিটি কক্ষে ফাটল ও ভাঙ্গন ধরেছে। বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠালে তারা ভবনকে পরিত্যাক্ত ঘোষনা না করে কর্মচারীদের নিরাপদে থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পোষ্ট মাষ্টার ।

ডাক বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জানান, ২০০৫ সালে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয় এবং ২০০৮ সালে ত্রুটিপূর্ণ ভবনটির সংস্কার করে এর উপর আবার দ্বিতীয় তলা স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে থেকে ভবনের ছাদ, কলাম ও পিলারে ব্যাপক পরিমানে ফাটল লক্ষ্য করা যায়। দাপ্তরিক ভাবে চিঠির মাধ্যমে তা অবহিত করা হয় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে। গত ১৫ মার্চ ডাক অধিদপ্তরের প্রকৌশল বিভাগ ভবনটি পরিদর্শন করেন এবং ভবনটি অধিক ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনের ভিতর বিভিন্ন পয়েন্টে ১৫-২০টি গাব খাছের খুটির মাধ্যমে ভবনের ছাদে ফিকা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন।



ডাক ঘরের সেবা গ্রহিতা স্কুল শিক্ষক মাহমুদা বেগম বলেন , শরীয়তপুরের প্রধান ডাকঘর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি মাসে একবার এখানে আসতে হয়। গত ছয় মাস যাবৎ গাবের খুটি দিয়ে ঠ্যাকা দিয়ে রাখা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে ভয় হয়। কাজ শেষে দ্রুত বের হয়ে যাই। কখন যেন ভবনটি রানা প্লাজার মত মৃত্যুকুপে পরিনত হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, আমি একজন নিয়মিত গ্রাহক। যতক্ষণই ভবনের ভেতরে থাকি সারাক্ষণ শুধু মনে মনে আল্লাহকে স্মরন করতে হয়। সরকারের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষনাকরে লোকজনকে এখান থেকে সরিয়ে নয়া।

ডাকঘরের কর্মকর্তা কাজী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রতি মুহুর্তই আতংকের মধ্যে অফিসে সময় কাটাতে হয়। চাকরী বাঁচাতে এক রকমের বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মৃত্যুকুপে গ্রাহকদের দৈনন্দিন সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা এই মরন আতংক থেকে মুক্তি চাই।

শরীয়তপুর প্রধান ডাকঘর পোষ্ট মাষ্টার শাহ মোহাম্মদ সোহেল বলেন, কার্যক্রম চালানোর বিকল্প জায়গা না থাকায় এ ঝুকিপূর্ণ ভবনেই দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে ডাক বিভাগকে। ঝুকি এড়াতে ডাক বিভাগের প্রকৌশল বিভাগ ভবনের নিচ তলায় পনেরটি গাব গাছের খুটি ছাদের সাথে দাড় করিয়ে দিয়েছে ।এরপরেও উদ্ধতনদের নির্দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সকলকে কাজ করতে হচ্ছে।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, প্রধান ডাকঘর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ আমি জেনেছি। বিষয়টি সম্পূর্নই ডাক বিভাগের উপর নির্ভরশীল। এর পরেও আমার কাছে কোন সহায়তা চাওয়া হলে আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

(কেএনআই/এএস/অক্টোবর ২০, ২০১৪)