শিতাংশু গুহ


সাবাস ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’র’ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ, সাবাস। ঠাকুরগাঁয়ের সিঁদুরপিন্ডি থেকে আটোয়ারী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারে সকল মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর হলো, কেউ জানলো না, কেউ কিছু করলো না! দুর্বৃত্ত চলে গেলে যথারীতি পুলিশ এলো, হিন্দুরা সেই পুরানো ডায়লগ, ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা’ শুনলো। পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা রুটিনমাফিক বললেন, এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নস্যাৎ করতে কিছু দুস্কৃতিকারী এ অপকর্ম করেছে।

মূর্তি ভাঙা বাংলাদেশে রুটিন, পুলিশের বক্তব্যও রুটিন। সারাদেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও মূর্তি ভাঙা হয়, পুলিশ কখনো চার্জশিট দেয়না। যদি জিজ্ঞাসা করেন, পুলিশের রুটিন উত্তর, ওপরের নির্দেশ ছাড়া তাঁরা কিছুই করতে পারেন না? বাংলাদেশে এপর্যন্ত হাজার হাজার মূর্তি ভাঙা হয়েছে, আজ পর্যন্ত একজনের বিচার হয়নি, একজন অপরাধী এ জেল খাটেনি। কারণটা কি? কারণ, মুক্তিভাঙ্গা জায়েজ। পুলিশের সাধ্য কি চার্জশিট দেয়, তাই বিচার হয়না।

হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে গ্রেফতার হয়, অচিরে তাঁরা ছাড়াও পায়। মুক্তি কারা ভাঙ্গে? কেন ভাঙে? ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়া কি মূর্তি ভাঙা সম্ভব? এই ‘বিদ্বেষ’ই যখন সম্প্রীতি, তখন দেশ তো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবেই। কেউ বলবেন কি, পূর্ব-পরিকল্পনা ছাড়া এক কিলোমিটার এলাকায় কয়েকঘন্টা ধরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কি সম্ভব? এটি কি বিশ্বাসযোগ্য যে, পুলিশ বা স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কেউ তা জানতেন না? এর পেছনে কি রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মদতদাতা নেই?

বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে এতগুলো মন্দিরে মূর্তি ভাঙা হলো, স্থানীয় হিন্দুরা কি সবাই ‘কুম্ভকর্ণের’ মত ঘুমাচ্ছিলেন? মন্দির রক্ষা করতে না পারলে আপনাদের পূজা করার দরকার কি? প্রশাসনের সাহায্য আশা করেন কেন, তাঁরা কি কখনো সাহায্য করে? ধিক, শতধিক, এলাকার সকল হিন্দুকে, সকল পুরুষকে, দোহাই আপনারা পূজা বন্ধ করেন, পূজা করার অধিকার আপনাদের নেই! কিছুই যদি করতে না পারেন, ঘোষণা দিয়ে ভারত চলে যান!

পূর্বাহ্নে ঢাকার দৈনিক ভোরের কাগজ ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ জানায় যে, এক রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে। শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোররাত পর্যন্ত ধনতলা, চাড়োল ও পাড়িয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ধনতলায় ৯টি, চাড়োলে ১টি, পাড়িয়ায় ৪টি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর হয়। ধনতলার সিন্দুরপিণ্ডি থেকে টাকাহারা পর্যন্ত ১টি হরিবাসর মন্দির, ১টি কৃষ্ণ ঠাকুর মন্দির, ৫টি মনসা মন্দির, ১টি লক্ষ্মী মন্দির ও ১টি কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর হয়। স্থানীয় এক হিন্দুনেতা এই মিডিয়াকে জানান, চাড়োল ইউনিয়নে ১টি কালীমন্দির, পাড়িয়ায় ১টি বুড়া-বুড়ি মন্দির, ১টি লক্ষ্মী মন্দির, ১টি আমাতি মন্দির ও ১টি মাসানমাঠ মন্দিরে প্রতিমা ভাঙ্গা হয়েছে। শুধু ভাঙা নয়, প্রতিমার হাত-পা, মাথা ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে, কিছু প্রতিমা ভেঙে পুকুরে ফেলে দেয়।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।