সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশন এলাকায় চলে যাওয়া একটি গরু আনতে গিয়ে এবার বাঘের আক্রমণে মো ফজলুর রহমান গাজী (৬২) নামের এক বৃদ্ধ আহত হয়েছেন। বাঘের আক্রমনে আহত ফজলু গাজীকে শুক্রবার সকালে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তির পর ডান পায়ের ক্ষতস্থানে অপারেশন করা হয়েছে।

গত ২৭ জানুয়ারি সকালে পূর্ব সুন্দরবনের ২৭ নম্বার কম্পার্টমেন্টের মিস্ত্রীর ছিলা এলাকার খালে মাছ ধরার সময় বাঘের আক্রমনে গুরুতর আহত হয় জেলে অনুকূল গাইন (৩৫)। এর দুইদিন পর রাতে সুন্দবন সংলগ্ন বাগেরহাটের মোড়েগলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম আমুরবুনিয়া গ্রামের ঢুকে পড়ে দুটি বাঘ। ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি স্টেশনের চান্দেশ্বর ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির দরজায় ৩টি বাঘ অবস্থান নিয়ে কর্মকর্তাসহ ৭ বনরক্ষীকে ২৪ ঘন্টাধরে অবরুদ্ধ করে রাখে। প্রজনন মৌসুমে বাঘের হিংশ্রতা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবনসহ বন সংলগ্ন লোকালয়ে এখন বাঘ আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় সুন্দরবন বিভাগ সর্বোচ্চ সর্তকতা জারি করে বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার কোন রকম ক্ষনি না করতে নির্দেশনার পাশাপাশি লোকালয়ে বনরক্ষী ও সুন্দরবন সুরক্ষায় সিপিজি সদস্যরা টহল দিচ্ছে।

শনিবার বিকালে বাগেরহাট ২৫০ বেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফজলু গাজী জানান, মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রাম থেকে তার একটি গরু ভোলা নদী পেরিয়ে ধানসাগর ষ্টেশন এলাকাব বনে ঢুকে পড়ে। সুন্দরবনে গহীনে গরুর কাছাকাছি পৌঁছালে একটি বাঘ আমার ডান পায়ে আক্রমণ করে। এসময়ে আমি ডাক-চিৎকার করতে থাকলে খালে দুটি নৌকায় মাছ ধরা কয়েকজন জেলে লগিবৈঠা নিয়ে এগিলে এলে বাঘটি আমাকে ছেড়ে বনের গহীনে চলে যায়। জেলেরা তাকে উদ্ধার করে বাড়ী পেওঁছে দেয়। সুন্দরবনে প্রবেশের কোন পাশপারমিট না থাকায় বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে বাড়ীতে বসে চিকিৎসা নিতে থাকি। বাঘের আক্রমণে ডান পায়ের ক্ষতস্থানে অবস্থা খারাপ হওয়ায় শনিবার সকালে বাগেরহাট হাসপাতলে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসকরা দুপুরে পায়ের ক্ষতস্থানে অপারেশন করেছে।

বাগেরহাট বাগেরহাট ২৫০ বেড হাসপাতালের তত্ত¡বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার জানান, সুন্দরবরে বাঘের আক্রমণে আহত ফজলু গাজীকে হাসপাতালে ভর্তির পর শনিবার দুপুরে তার ডান পায়ের ক্ষতস্থানে অপারেশন করা হয়েছে। তার ডান পায়ের ক্ষত অনেক বেশি। সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। লোকটি অতিদরিদ্র হওযায় তার পক্ষে চিকিৎসার ব্যয় মেটানোও কঠিন। এই অবস্থায় তাকে হাসপাতাল ভর্তি করে সরকারি খরচে সব ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে।

বাগেরহোটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনে এখন বাঘের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন মৌসুমে বাঘের হিংশ্রতা বেড়ে যায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাঘ জেলেদের উপর আক্রমণসহ লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এমনকি বন অফিসের সামনে ২৪ ঘন্টা অবস্থান নিয়ে থেকেছে। এই অবস্থায় সুন্দরবন বিভাগ সর্বোচ্চ সর্তকতা জারি করে বাঘের কোন রকম ক্ষনি না করতে নির্দেশনার পাশাপাশি লোকালয়ে বনরক্ষী ও সুন্দরবন সুরক্ষায় সিপিজি সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহল ব্যবস্থা করা হয়েছে।

(এসএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩)