গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত তিতাস বার্তা (ম্যাগাজিন) পত্রিকার ১৫ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ১২ জনকে 'গুণীজন সম্মাননা' প্রদান করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে জেলা সদরের শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বরে অনুষ্ঠিত এক জমকালো আয়োজনে তিতাস বার্তার পক্ষ থেকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন 'প্রধান অতিথি' হিসেবে উপস্থিত থেকে সংবর্ধিত গুণীজনদের হাতে সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকার ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কৃতি সন্তান, জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে মঞ্চে আসন গ্রহণ করা সকল অতিথিকে তিতাস বার্তার পক্ষ থেকে দৃষ্টিনন্দন উত্তোরীয় পড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর সযবর্ধিত ১২ জনের হাতে সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেয়া হয়।

তিতাস বার্তা সম্মাননা ক্রেষ্ট পাওয়া ১২ জন হলেন সাংবাদিকতায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, প্রবীণ সাংবাদিক সুবল কুমার দে, বাংলাদেশের গ্লোবাল টিভির সিইও, স্পষ্টবাদী সাংবাদিক খ্যাত সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাহিত্যে ভারতের আগরতলার বিশিষ্ট লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদ, ত্রিপুরা রাজ্যের সভাপতি ড. দেবব্রত দেব রায় ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক, প্রথম আলোতে কর্মরত, অনুকাব্যের জনক ও শিশু সাহিত্যিক সাইদুজ্জামান রওশন (দন্তস্য রওশন), সঙ্গীতে বাংলাদেশের ঢাকা ব্যান্ডের কর্ণধার মাকসুদুল হক, সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের বিশিষ্ট অভিনেতা সাজু খাদেম, বিশিষ্ট অভিনেত্রী উর্মিলা শ্রাবন্তী কর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা রেজিষ্ট্রার লুৎফুল কবির সরকার, শিল্প ও বাণিজ্যে এভারেস্ট ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের ডিরেক্টর এন্ড কো ফাউন্ডার লায়ন অঞ্জন মল্লিক (এফসিএ), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এডি মো. মিজানুর রহমান এবং সমাজসেবায় সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজসেবক আরিফুর রহমান আরিফ।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য রআম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহিদ খান লাভলু। অনুষ্ঠানে 'প্রধান বক্তা' ছিলেন তিতাস বার্তার প্রধান উপদেষ্টা মো. শাহজাদা খাদেম। এতে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শাহরিয়ার রহমান, জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আলমগীর গণি, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. বাহারুল ইসলাম মোল্লা, সবুজ হাউজিং প্রকল্পের চেয়ারম্যান সায়েদুর রহমান সাঈদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তিতাস বার্তার সম্পাদক এম এ মতিন সানু। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শদস্য সচিব ও তিতাস বার্তার নির্বাহী সম্পাদক সঞ্জীব ভট্টাচার্য, আগরতলা থেকে আগত সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমিত ভৌমিক ও ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদ, ত্রিপুরা রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. মুজাহিদ রহমান।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদের পক্ষ থেকেও তিতাস বার্তার সম্পাদকসহ পত্রিকাটির ৬ জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে আগরতলাবাসীর পক্ষ থেকে ভারতীয় উত্তোরীয় পড়িয়ে তাঁদের হাতে আগরতলা থেকে আনা বিশেষ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সংগঠনের সভাপতি ড. দেবব্রত দেব রায় ও কার্যকরী সম্পাদক ও আগরতলার বিশিষ্ট গীতিকার গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেবনাথ।

আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষের দিকে 'প্রধান অতিথি' অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছলে, তাঁকে যথাযথ সম্মান দিয়ে মঞ্চে প্রধান অতিথির পাশে এনে আসন গ্রহণ করানো হয়। এ সময় মঞ্চের অতিথিবৃন্দসহ উপস্থিত কয়েকশ দর্শক দাঁড়িয়ে দেশের বিশিষ্ট এই দুই শিক্ষাবিদকে (দম্পতি) তুমুল করতালি দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।

দুই পর্বে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত জমকালো এ অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন নবীনগরের কথার সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু ও বাচিকশিল্পী ইসরাত জাহান তমা।

অনুষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক সহযোগীতা করেছে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ড. মুজাহিদ রহমান ও স্বর্নিমা দেব রায়ের নেতৃত্বে আগরতলা থেকে আগত ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের বিভিন্ন পরিবেশনা ছিলো মনোমুগ্ধকর।

দলটির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক পর্বে কবিতা, গান ও নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন শ্যামল কান্তি দে, গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেবনাথ, বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী, অমর ঘোষ, অর্পিতা দাস, স্বেতা দেব রায়, কুশল কান্তি দেব, সাগরিমা দে, শ্যামলিমা দে ও ইনশা আক্তার।

সবশেষে বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পৃথ্বী পালের পরপর গাওয়া তিনটি গানের মধ্য দিয়ে মধ্যরাতে প্রায় চারঘন্ঘটার এ ব্যতিক্রমী আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

(জিডি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩)