রহিম আব্দুর রহিম


শিশুরা জাতির ভবিষৎ, এই ভবিষৎ প্রজন্মের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, বিনোদন নিশ্চিত করার দায়িত্ব তার অভিভাবকের। এর মধ্যে আনন্দঘণ, সহজলভ্য শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার সামষ্টিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের। উন্নত পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র নায়করা প্রথমেই শিশুর ভবিষৎ যাতে আলোকিত হয় এমন বিষয়টিকে লক্ষ্য রেখে শিশু শিক্ষার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, ভবিষৎ ফলাফল কি হতে পারে তা মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণালব্দ পরিকল্পনায় শিশুর শিক্ষায় রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে থাকে। ফলে তাদের শিক্ষায় সুদক্ষকর্মী সৃষ্টি এবং শিক্ষা শেষে কর্মময় জীবনের অধিকারি হয়ে ওঠেন একজন অবলা, অবুঝ, অদক্ষ মানুষ। ওই সমস্ত দেশের শিক্ষা ভাবনায় সবচেয়ে সর্তক ও সুরক্ষিত পরিবেশে পাঠদান, পাঠ উদ্দেশ্য কার্যকর করতে হয়। কোন ভাবেই শিশু মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে এমনটি কোনক্রমেই হতে দেয়া হয় না। উচ্চ শিক্ষিত, শিশুদের বুঝে এমনসব জনবল দিয়ে গঠন করা হয় শিক্ষাকর্মী বাহিনী। অথচ আমাদের বাংলাদেশে উল্টো।

আমাদের শিশুরা অবহেলিত, গুরুত্বহীন, এদের শিক্ষাক্ষেত্রে হর হামেসায় ভুতের আচড়।শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কোন কালেই গবেষণা হয়নি, প্রয়োজনও মনে করেনি। ফলে দেশে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, তার দ্বারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি শিশু শিক্ষায় যে কলঙ্ক লেপন হলো তাতে বাহাত্তুরে কলংককেও হার মানালো। কত শিশুর কোমল মনে যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিষাক্ত ছুরি বসানো হলো তা কি, কেউ কখনো ভেবেছেন? পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা। স্কুল পর্যায়ে সবাইকে অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষের মর্জি মেজাজে নির্বাচিত হয়েছে শিক্ষার্থী। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণায় আজগবি কারবার, পরীক্ষা দেয়নি এমন শিক্ষার্থীর ব্যাগেও ডুকেছে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার সার্টিফিকেট।বেরসিক সাংবাদিকরা গোমর ফাঁস করে দেওয়াতে আজগবি ফলাফল স্থগিত।

সংশ্লিষ্টদের জবাব, কারিগরি ত্রুটি, এই কারিগরি কারখানার কারিগর কিন্তু সরকারের অর্থে লালিত পালিত রাষ্ট্টের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই। পুনরায় ফলাফল ঘোষণায় করলে গজব কান্ড পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০০৮ সালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রোয়াইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একজন মাত্র শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল। দীর্ঘ ১৫বছর আর কেউ ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি পায় নি। এ বছর এই প্রতিষ্ঠানের ৩জন বৃত্তি পেয়েছিল। এতে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে যে আনন্দ উদ্দীপনা বিরাজ করছিলো তার চেয়ে বহুগুণে আনন্দ উল্লাসে ভরে ওঠেছিলো সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মনে। এই আনন্দ উল্লাস বেশিক্ষণ টেকেনি। পুনরায় ফল ঘোষণায় তাদের তিনজনের একজনের নামও নেই। যে শিক্ষার্থী পরীক্ষা না দিয়ে বৃত্তি পেয়েছিল এটা আজগবি হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীর মনে পাওয়া, না পাওয়ার কোন বেদনা নেই। কিন্তু যে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাওয়ার আনন্দ ভোগ করার পর, পুর্নঃঘোষিত ফলাফলে গজব দেখলো তাদের মন, চিত্ত, ধ্যান-ধারনার ভবিষৎ খাতায় কি অঙ্কিত হলো? তা দায়িত্বে থাকা, দায়িত্ব জ্ঞানহীন ব্যক্তিরা হিসাব মিলাতে পারছেন কি না; এটাই ভাবনার বিষয়।বৃত্তি কোন অর্থ,সম্পদের মাপকাঠি নয়,এটা শিক্ষাসম্মান মাত্র।

জানা মতে, প্রাথমিক বৃত্তির মোট কোটা ৮২হাজার ৫০০টি। এবছর (২০২২) প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ জন বৃত্তি পেয়েছে।এরমধ্যে মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুলে) ৩৩ হাজার, সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন।বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মেধাবৃত্তিতে প্রতিমাসে ৩'শ টাকা, সাধারণ কোটায় মাসে ২'শ ২৫টাকা পেয়ে থাকে, একই সাথে সকল স্তরের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বছরে এককালীন ২শ ২৫ টাকা পায়। শিশু শিক্ষায় এবারের আজগবি এবং গজব ফলাফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্ঠে বারবার উচ্চারিত সুকান্তের অমর কবিতা ছাড়পত্রের" এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" চরণগুলো আজ কতটাই না অসহায়!

লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার, গবেষক ও শিশুসংগঠক।