শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের মাটি স্ট্রবেরী ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আবহাওয়া আর পরিবেশ সবকিছুই অনুকূলে থাকায় স্ট্রবেরী চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটিই প্রমাণ করেছেন নকলা উপজেলার রামেরকান্দি গ্রামের মাহবুব উদ্দিন দুলাল।

এলাকার ৮২ শতক জমি লীজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরী খামার গড়ে করে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এখন স্ট্রবেরী চাষ এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। অন্যান্য আবাদের তুলনায় অল্প সময়ে অধিক লাভজনক ফসল হিসেবে অনেক কৃষষকই এই স্ট্রবেরী খামার পরিদর্শন করে স্ট্ররেবী চাষের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

প্রায় আট বছর আগে স্থানীয় কৃষি কর্মর্কতাদের সহযোগিতায় নকলা উপজেলার রামেরকান্দি গ্রামের কৃষক মাহবুব উদ্দিন দুলাল ২০ হাজার টাকায় বার্ষিক চুক্তিতে ৪০ শতক জমি লীজ নিয়ে এই স্ট্রবেরী খামার গড়ে তুলেন। স্ট্রবেরী চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই তার খামারে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। এ বছর ৮২ শতক জমিতে স্ট্রবেরী চাষ করা হয়েছে। স্ট্রবেরী ফল উৎপাদনের পাশাপাশি এখন এ খামার থেকে স্ট্রবেরীর চারা গাছও বিক্রী করা হচ্ছে।

স্ট্রবেরী চাষী মাহবুব উদ্দিন দুলাল জানান, ৮২ শতক জমিতে এবার স্ট্রবেরী আবাদ করতে তার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ৬ লাখ টাকার স্ট্রবেরী ফল বিক্রী করেছেন। এছাড়া ২০ হাজার টাকার চারাও বিক্রী করেছেন। তার স্ট্রবেরী নার্সারীতে আরও প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যমানের স্ট্রবেরী চারা মজুদ রয়েছে। প্রতিদিনের উত্তোলিত ফল প্রতিদিনই বিক্রি করতে হয়। ঢাকার বিভিন্ন ফলের দোকান এবং স্থানীয়ভাবে তিনি এসব স্ট্রবেরী ফল বিক্রি করছেন বলে জানান। এ স্ট্রবেরী খামারে ১০ হাজার গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে এক-দেড় কেজি করে ফলন পাওয়া যায়। তিনি জানান, এখানে ৬ জন শ্রমিক কাজ করছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা এখন তার স্ট্রবেরী খামার দেখতে আসছেন এবং এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তার নিকট থেকে অবহিত হচ্ছেন।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্ট্রবেরী চারা রোপন করতে হয় এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারীর দিকে স্ট্রবেরী ফল তোলা শুরু হয়, চলে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত। প্রতিদিন এ স্ট্রবেরী খামার থেকে বর্তমানে দেড়-দুইশ’ কেজি স্ট্রবেরী ফল তুলে বিক্রী করা হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে এবার প্রতি কেজি স্ট্রবেরী আটশ’ টাকায় এবং বর্র্তমানে দুইশ’ টাকা দরে বিক্রী হয়।

নকলা উপজেলার রামেরকান্দি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, স্ট্রবেরী ফল বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও খুবই সুস্বাদু। স্ট্রবেরীর ফ্লেভার দিয়ে দেশে বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে। স্ট্রবেরী চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ মাটির প্রয়োজন। শেরপুর জেলা বিশেষ করে নকলার মাটি বেলে দো-আঁশ হওয়ায় এখানে স্ট্রবেরী ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে আমরা কৃষি বিভাগ স্ট্রবেরী ফল চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধকরনের চেষ্টা করছি। কোন চাষী আগ্রহী হলে তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।

স্ট্রবেরী চাষী মাহবুব উদ্দিন দুলাল বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে স্ট্রবেরী চাষে অল্প সময়ে যে লাভ পাওয়া যায়, কৃষিতে কোনো ফসলে অত লাভ হয়না। তাই আমি প্রতি বছরই স্ট্রবেরী চাষ করছি। তার খামারে দেখা হওয়া চিথলিয়া গ্রামের শাহিন মিয়া জানান, আমি এ খামারটা দেখতে এসেছি। আমার কিছু জমি আছে, চিন্তা করছি, সেখানে স্ট্রবেরী চাষ করবো। কারণ কিছুটা রিস্ক থাকলেও এটার আবাদ বেশ লাভজনক মনে হয়েছে।

গৌড়দ্বার এলাকার ইমর উদ্দিন জানান, আমি এই খামার থেকে স্ট্রবেরী নিয়ে ঢাকায় বিক্রী করি। এতে করে মাসে আমার ৭/৮ হাজার টাকা আয় হয়। এই স্ট্রবেরী খামার হওয়ায় আমার মতো আরও কয়েকজনের ইনকাম ও কাজের সুযোগ হয়েছে। এত অল্প সময়ে স্টসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্ট্রবেরী ফল চাষ করে অনেকেই লাভবান হতে পারবেন বলে স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করছেন।


(এইচবি/এটি/এপ্রিল ২৯, ২০১৪)