আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আর্থিক ঘাটতি ও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির জেরে শ্রীলঙ্কায় চড়া ডিমের বাজার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে এখন প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ শ্রীলঙ্কান রুপিতে (প্রায় ১০ টাকা)। এর ফলে চরম সমস্যায় পড়েছে সেখানকার সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় দাম কমাতে প্রতিবেশী ভারত থেকে ২০ লাখ ডিম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঙ্কান সরকার। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। ভারত যেসব এলাকার ডিম শ্রীলঙ্কায় পাঠাচ্ছে, ওইসব এলাকায় সম্প্রতি বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে ডিম নেওয়া ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে শ্রীলঙ্কা।

লঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার স্টেট ট্রেডিং করপোরেশন (এসটিসি) নিশ্চিত করেছে, এসব ডিম দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের নামাক্কাল থেকে আমদানি করা হচ্ছে।

দ্য হিন্দু, এনডিটিভি, দ্য উইক, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আউটলুক, দ্য ইকোনমিক টাইমসের মতো ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, নামাক্কাল এবং কেরালায় ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল বার্ড ফ্লু ভাইরাস (এইচ৫এন১)। এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে তামিলনাড়ু প্রশাসন।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ওই এলাকাগুলোতে বার্ড ফ্লুর ঝুঁকি এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতেও নামাক্কাল-কেরালায় বার্ড ফ্লুর উপস্থিতি ধরা পেড়েছে। ভাইরাসটি এখন ভারতের আরও অনেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ কারণে, ভারত থেকে ডিম আমদানির ফলে শ্রীলঙ্কায়ও বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অল সিলন এগ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শরৎ আত্তানায়েক বলেন, বর্তমানে সারা ভারতে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ডিম বিক্রিও কমে গেছে। ভারতে একেকটি ডিমের পাইকারি দাম ভারতীয় চার রুপির মতো।

লঙ্কান অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে ডেইলি মিরর জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা যে ২০ লাখ ভারতীয় ডিম আমদানি করবে, তার প্রতি পিসের পাইকারি দাম ধরা হয়েছে ভারতীয় সাড়ে তিন রুপি (সাড়ে চার টাকা প্রায়)।

আত্তানায়েক জানান, শ্রীলঙ্কার বাণিজ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা মন্ত্রী নলিন ফার্নান্দোর সাম্প্রতিক ভারত সফরের পর থেকে ডিম আমদানি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।

তিনি বলেন, নলিন ফার্নান্দো যখন সাথোসার (হোলসেল কোম্পানি) চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি ভারত থেকে ডিম ও নারকেল আমদানি করতেন। তখন বার্ড ফ্লু ও কোকোনাট মাইট ভাইরাস শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করে। ফলে প্রচুর ডিম ও নারকেল সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।

অল সিলন এগ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ভারত থেকে আনা ডিম লঙ্কান ৩০ রুপির পরিবর্তে ১৫ রুপিতে বিক্রি করা যায়। দেশীয় ডিম উৎপাদনকারীরা প্রতি মাসে পোল্ট্রিখাদ্যের জন্য প্রায় দুই কোটি রুপি কর দেন। সরকার যদি এই কর মওকুফ করে, তাহলে প্রতি পিস দেশি ডিম ২৫ রুপিতে বিক্রি করা যাবে।

এর আগে, লঙ্কান পশু উৎপাদন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হেমালি কোথালাওয়ালা বলেছিলেন, ভারত থেকে এমনিতে ডিম আমদানিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সে দেশে বার্ড ফ্লু থাকলে ডিম আমদানির অনুমতি দিতে পারবেন না। তিনি বলেছিলেন, ভারতে সাম্প্রতিক বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবের কারণে ডিম আমদানির জন্য আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক জেনারেলকে কোনো সুপারিশ করা যাবে না।

তবে পরে সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়নোর শর্তে ভারতীয় ডিম আমদানির অনুমতি দেয় লঙ্কান কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে হাত দিয়ে ডিমের খোসা না ছাড়ানো, গ্লাভস ব্যবহার করা এবং ডিমের খোসা ধ্বংস করার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

ডেইলি মিরর জানিয়েছে, ভারত থেকে আমদানি করা ডিম শ্রীলঙ্কার দুটি প্রধান বিস্কুট ও কেক প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে দিতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু তারা সেগুলো নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কোম্পানিগুলোর দাবি, ভারতের বার্ড ফ্লু যদি ডিমের সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায়, তবে এটি তাদের শিল্পেরও ক্ষতির কারণ হবে।

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২৩)