শিতাংশু গুহ


নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো রাজনৈতিক মঞ্চে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন, বলা হচ্ছিলো তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবেন। ডেমক্রেটিক পার্টির ভেতরে উচ্চমহলে সবার সেটা পছন্দ ছিলোনা। শুরু হলো নারী কেলেঙ্কারি ঘটনা। মিডিয়া এমনভাবে লাগলো যে, মনে হলো তাঁর মত খারাপ লোক আর নাই! তিনি পদত্যাগ করলেন। রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে সবই ছিলো মিথ্যা প্রচারণা। 

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্যেও একই কথা প্রযোজ্য। রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে তাঁকে সরানোর জন্যে সর্বশেষ গ্রেফতার নাটক। ট্রাম্প নাছোড়বান্দা, তিনি অত সহজে যাচ্ছেন না! এন্ড্রু ক্যুমো ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘটনার তফাৎ হচ্ছে, ক্যুমো নাটক ছিলো ডেমক্রেট দলের ভেতরের; আর ট্রাম্পের নাটক দুই দলের, ডেমক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যকার।

ডেমক্রেটরা ট্রাম্পকে সহ্যই করতে পারছে না, এর প্রধান কারণ তিনি মূলত: ক্লিন্টন, ওবামা, বুশ যুগের অবসান ঘটিয়ে দিয়েছেন। কিছু রিপাবলিকানও চান ট্রাম্প দৃশ্যপট থেকে সরে দাঁড়াক। এর কারণ হচ্ছে, ট্রাম্প প্রতিদ্ধন্ধিতায় থাকলে সম্ভবত: ২০২৪-এ তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। এতে জনগণ উপকৃত হলেও উভয় দলের বড়বড় নেতাদের অসুবিধা।

আমেরিকায় চাইলেই কেউ কাউকে সরাতে পারেনা, তাই ট্রাম্পকে যেকোন ভাবে দণ্ডিত করার প্রচেষ্টা চলছে। আপাতত: একাজটি করছেন নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নি (ডিএ) ডেমক্রেট আলভিন ব্র্যাগ। সেক্স স্ক্যান্ডালের রাস্তাই তিনি বেছে নিয়েছেন। ২০১৬-তে ট্রাম্প শিবির মডেল-অভিনেত্রী স্টরমি ড্যানিয়েলের মুখ বন্ধ করার জন্যে $১৩০,০০০/০০ দেয়।

তখন থেকেই এটি নিয়ে বিতর্ক চলছিলো। ২০২০-তে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হ’ন। ফেডারেল বিচার বিভাগ এনিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখেছে, এটি জোরালো কেস নয়, কিন্তু ম্যানহাটন ডিএ ছাড়তে রাজি নন! ডেমক্রেটদের ধারণা ছিলো ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা গেলে কিছু রিপাব্লিকানের (জিওপি) সমর্থন পাওয়া যাবে। কার্যত: দেখা যাচ্ছে, জিওপি ট্রাম্পের পেছনেই আছে।

স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থী ম্যানহাটন ডিএ’র বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। শক্তিশালী কেন্টাকি সেনেটর রান্ড পল ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্যে ম্যানহাটন ডিএ-কে জেলে পাঠানোর কথা বলেছেন। এমুহুর্তে ট্রাম্পের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্ধন্ধী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি সান্টিস ম্যানহাটন ডিএ’র নিন্দা করেছেন। হাউস বিচার কমিটি ম্যানহাটন ডিএ-কে চিঠি দিয়ে কাগজপত্র পাঠাতে বলেছে।

ট্রাম্প ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির নন, নারী-ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার তাঁর আছে, কার নাই? ট্রাম্প নিজে বলেছেন, তিনি নির্যাতীত। মার্কিন ইতিহাসে একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এত প্রচারণা কখনো হয়নি। তিনি দুইবার ইম্পিচইড হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য তদন্ত এখনো চলছে। ‘মার্-এ-লগো’ ডক্যুমেন্ট তদন্তে তিনি এখনো বিপদে আছেন। অথচ বাইডেনও একই দোষে দোষী,!

স্টরমি ড্যানিয়েল অর্থপ্রদান কেস-এ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সাক্ষী হচ্ছেন তারই সাবেক এটর্নি মাইকেল কোহেন, তিনি রাজসাক্ষী এবং দণ্ডিত। কোহেন’র বক্তব্য, স্টরমি ড্যানিয়েলকে টাকা দেয়ার নির্দেশ ট্রাম্প দিয়েছেন। ট্রাম্প গ্রেফতার হচ্ছেন প্রচারণা শুরু হলে তাঁর এটর্নি বব কাস্টিলো সাক্ষী দিয়ে বলেছেন, কোহেনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়, তিনি দণ্ডিত ও মিথ্যাবাদী। তিনি আরো বলেন, ট্রাম্প টাকা দেয়ার নির্দেশ দেননি। গ্র্যান্ড জ্যুরি কার বক্তব্য বিশ্বাস করবেন?

স্পষ্টত: এটি রাজনৈতিক মামলা। যত দিন যাবে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা ততটা কঠিন হবে? সদ্য ট্রাম্প বলেছেন, ওঁরা মনে হয় ভুয়া মামলা প্রত্যাহার করবে। ম্যানহাটন ডিএ’র ওপর চাপ বাড়ছে। ট্রাম্প যদি অভিযুক্ত হ’নও, তাহলে মামলা চলবে, মামলার রায়ে বাদবাকি নির্ভর করবে। আইনজ্ঞরা বলেছেন, এটি ‘মিস্ডমিনার’, ‘ফেলনি’ নয়, অর্থাৎ ক্রিমিনাল অফেন্স নয়? এ মামলা কি ধোপে টিকবে? না টিকলেও ট্রাম্পের জন্যে হয়তো এটিই শেষ নয়!

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।