স্টাফ রিপোর্টার : এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক হতে পারবে না এমন বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২৩ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) মন্ত্রিসভা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।

তিনি বলেন, বর্তমানে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকতে পারেন। এটা পরিবর্তন করে এখন সর্বোচ্চ তিনজন করা হয়েছে।

মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবিত আইনে মোট ৩৪টি ধারণা রয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি কারা তার একটা সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ সচিব জানান, সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ, অগ্রিম বা বিনিয়োগ বা আর্থিক সুবিধর অংশ বা তার ওপর আরোপিত সুদ পরিশোধ না করে তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে।

এছাড়া কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করলে, সেটাকেও ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির আওতায় আনা হয়েছে।

একই সঙ্গে যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ অগ্রিম নেওয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য ব্যবহার না করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

সচিব বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) কাছে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হিসেবে পরিগণিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার)।

তিনি বলেন, নোটিশ প্রদানের দুই মাসের মধ্যে ঋণ খেলাপি গ্রহীতা তার কাছে পাওনা টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণ খেলাপির তালিকা না পাঠায়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ লাখ এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে। তারপরও যদি লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে তাহলে প্রতিদিনের জন্য এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা যাবে।

মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন, ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঋণ প্রদান ও জামানত গ্রহণ- এ বিষয়টি নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা তার আত্মীয় যেই হোক না কেন তাকে অবশ্যই জামানত বা বন্ড বা সিকিউরিটি দিয়ে ঋণ নিতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক কোনো পরিচালক বা পরিচালকের পরিবারের সদস্যকে জামনতি ঋণ বা অগ্রিম ছাড়া অন্য কোনো ঋণ বা অগ্রিম মঞ্জুর করবে না। পরিচালক বা পরিচালকের সদস্যকর্তৃক দায় গ্রহণের ভিত্তিতে জামনতি ঋণ, অগ্রিমঋণ, বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা প্রদান করবে না। এখন এটা নির্দিষ্ট করা হয়েছে যে- সে যেই হোক না কেন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে কো-লেটারেল থাকতে হবে। যেমন, জামানত, বন্ধক থাকতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সবার ক্ষেত্রে।

মাহমুদুল হোসাইন খান আরও বলেন, ব্যাংক কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বা ফাউন্ডেশন যেন বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ইন্সপেকশন করতে পারে সেই ধারা এখানে সংযোজন করা হয়েছে।

কবে থেকে এ আইন কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আজ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন সংসদে যাবে, সেখানে আইন পাশ হলে তারপর কার্যকর হবে। তবে সেখানে সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ রয়েছে। কমিটি যাচাই বাছাই করবে। প্রয়োজন হলে কিছু বিষয় আনতে পারবে। আবার কিছু বাদও দিতে পারবে।

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২৩)