নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে নিহত জেসমিনের পরিবার ও স্বজনদের মাঝে কান্নার রোল এখনো থামেনি। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ শুনে অবাক হয়েছেন তাঁর স্বজন, প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা। সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, ‘আমার ভাগ্নি অত্যন্ত সাদামাটা একজন গৃহিণী। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ছোট্ট একটা চাকরি করে ছেলেটাকে মানুষ করছে সে। তাঁর ছেলের লেখাপড়ার খরচের টাকা অনেক সময় আমাকে দিতে হয়। আর্থিক অনিয়ম করলে তো অভাব-অনটন থাকতো না। তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমার ভাগ্নি একটা চক্রান্তের শিকার হয়েছে। আমার বিশ্বাস, সঠিকভাবে তদন্ত করলে তাঁর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’

নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ পাড়ায় জেসমিনের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তাঁর একমাত্র ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত ঘরে আছেন। কিন্তু কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

জেসমিনের ছোট ভাই সোহাগ মিয়া এবং ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম গত রবিবার গণমাধ্যমকে র‌্যাব হেফজাতে জেসমিনের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিলেও এখন তাঁরা আর কোনো কথা বলছেন না। জেসমিনের ভাই সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমার বোনের সঙ্গে যা ঘটেছে এটা সবাই জানে। আর কোনো কথা বলতে চাই না। মামলা করতে চাই না। আমাদের কোনো দাবি নাই।’

সুলতানা জেসমিন নওগাঁর চ-িপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন। আট বছর ধরে শহরের জনকল্যাণপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। প্রায় ১৭ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

তাঁর ভাড়া বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুলতানা জেসমিন দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকলেও তাঁর কোনো অস্বাভাবিক আচরন বা চলাফেরা কখনো চোখে পড়েনি। একদম নিভৃতভাবে চলাফেরা করতেন। তাঁর মতো নারী অন্যের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষকে প্রতারণা করবে এতে তিনি বিস্মিত।
র‌্যাব হেফাজতে নিহত জেসমিনের সহকর্মী নওগাঁর চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী মোমেনা খাতুন বলেছেন, ‘জেসমিন শান্তশিষ্ট মানুষ ছিলেন। এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই জেসমিনকে একজন ভালো সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি। অতীতেও তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আমনা পাইনি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় অবাকই হয়েছি আমরা।

গত ২২ মার্চ (বুধবার) নওগাঁ সদরের হাজি মনসুর রোডের বাসিন্দা জেসমিনকে আটক করে র‌্যাব। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন শুক্রবার মারা যান জেসমিন। আটকের পর র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুরের হাইমচর থানার গাজীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আল আমিন ও সুলতানা জেসমিনসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন ব্যক্তি যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নাম ও পদবি ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী এনামুল হকের অভিযোগ

জেসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনিসহ কয়েকজন বাদীর পরিচয় ও পদবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলেন। এরপর চাকরি দেয়ার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে জেসমিনের মামা নাজমুল হক মন্টু বলেন, তাঁর ভাগনি মোবাইল ও কম্পিউটার ঠিকমতো ব্যবহারই করতে পারতেন না। এ জন্য অফিসের সহকর্মীদের কাছে তাঁকে কথা শুনতে হতো। তাঁর যে জীবনাচরণ ছিল, তাতে অন্যের নামে ফেসবুক আইডি খুলে প্রতারণা করা অসম্ভব।

জেসমিনের (৪৩) বাড়ি নওগাঁ সদরের হাজি মনসুর রোডে। এ মামলায় জেসমিন ছাড়াও মো. আল আমিন (৩২) নামের একজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচরে। আল আমিন সম্পর্কে সুলতানা জেসমিনের স্বজনেরা বলছেন, এই নামের কারও সঙ্গে সুলতানার পরিচয় ছিল, এটা তাঁদের জানা নেই। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনকেও আসামি করা হয়েছে।

নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসান জানান, তাঁরা জেসমিনের বিরুদ্ধে এর আগের কোনো মামলার তথ্য পাননি।

সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলছেন, মামলা দায়েরের আগে আটক, বেআইনি জিজ্ঞাসাবাদ ও পুলিশকে না জানানো সংবিধান, মানবাধিকারের মূলনীতি, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন। আর এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের নিকৃষ্ট উদাহরণ। তাদের অভিমত, আগের ঘটনাগুলোর আইনগত প্রতিকার না হওয়ায় বারবার একই ঘটনা ঘটছে।

এজাহারে বাদী যা বলেছেন

বাদী এনামুল হক এজাহারে বলেছেন, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে তাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলেছিলেন জেসমিন ও তাঁর সহযোগীরা। ওই আইডিতে সরকারি কাজ বাস্তবায়নের সময় তোলা তাঁর (এনামুল) ছবি শেয়ার করছিলেন তাঁরা। ১৯ মার্চ রাজশাহী মহানগরের রাজপাড়ায় তাঁর কার্যালয়ের সামনে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার তথ্যও তিনি পেয়েছেন। এসব অর্থ জেসমিন নিজের ব্যাংক হিসাব এবং মুঠোফোনে আর্থিক সেবার হিসাবে লেনদেন করতেন বলেও জানতে পেরেছেন। এতে তাঁর (এনামুল) সম্মানহানি হয়েছে।

এজাহারে এনামুল হক উল্লেখ করেন, দাপ্তরিক কাজে নওগাঁয় যাওয়ার সময় তিনি গত বুধবার সোয়া ১১টার দিকে নওগাঁ বাসস্ট্যান্ডে র‌্যাবের একটি টহল দলকে বিষয়টি জানান। ওই দলের ইনচার্জ ডিএডি মো. মাসুদ বিস্তারিত শুনে জানান, এ ধরনের অপরাধ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় পড়ে। পরে র‌্যাব কর্মকর্তারা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সুলতানা জেসমিনের অবস্থান শনাক্ত করেন। এনামুল হককে সঙ্গে নিয়ে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে ১১টা ৫০ মিনিটে জেসমিনকে আটক করে র‌্যাবের দলটি। তাঁর কাছ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রতারণার বিষয়টি র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেন। তাঁর মুঠোফোনেও এসব প্রতারণার তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদের একটা পর্যায়ে জেসমিন অসুস্থ হয়ে পড়েন।

মামলা করতে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জেসমিন অসুস্থ হওয়ায় তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা ও শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তিনি (বাদী) স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে র‌্যাবের সহযোগিতায় থানায় এজাহার করেন।

জেসমিনের লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল।

তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত্যুসনদে উল্লেখ করা হয়েছে, মাথায় আঘাতের কারণে জেসমিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন

নওগাঁয় আটকের পর র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নওগাঁ জেলা শাখার আয়োজনে মঙ্গলবার বিকেলে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

বক্তারা বলেন, র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরণের ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই আছে এবং থাকবে।

বাসদ নওগাঁ জেলা কমিটির সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিনের মুকুলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাসদ নওগাঁ জেলা শাখার উপদেষ্টা আলতাফুল হক চৌধুরী (আরব), সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের জেলা কমিটির সভাপতি কালিপদ সরকার, বাসদ জেলা কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান প্রমুখ।

জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, অতীতে র‌্যাবের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়ায় মামলা হওয়ায় আগেই আটক ও বেআইনিভাবে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা ঘটতেই আছে। কোনো ব্যক্তি অপরাধ করে থাকতে পারে। কিন্তু সেই অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার একটা প্রক্রিয়া আছে। অপরাধীরেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকতে হয় আইনে। কিন্তু আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এ ধরণের মৃত্যুর ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় দোষী সাবাস্ত হলে তাঁকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যাথায় এ ধরণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

সুলতানার মৃত্যুর বিষয়ে র‌্যাব সদরদপ্তরের বক্তব্য

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের (৪৩) মৃত্যুর অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতÍ সঙ্গে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সদরদপ্তর। বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি করে র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। তারা এনামুলের নামে বিপুল অর্থ আদায় করে আসছিল। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে এনামুল ২০২২ সালের মার্চে একটি জিডি করেন।

এমনকি একজন মহিলা তার নামে আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন মর্মে আদালতে একটি মামলাও করেন এনামুল। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন এবং বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছেন।

গত ১৯ ও ২০ মার্চ এনামুলের নাম-পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পারেন এ প্রতারণায় আলামিন নামে একজন রয়েছেন এবং তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন জেসমিন নামে একজন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ অফিসে যাওয়ার সময় র‌্যাবের টহল টিম দেখে এনামুল এ বিষয়ে অভিযোগ করে সহায়তা চান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাবের টিম এনামুলসহ গিয়ে তার সামনে সুলতানা জেসমিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অন্য আরো ২ জন সাক্ষীর সামনে র‌্যাবের নারী সদস্যরা জেসমিনকে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন সাক্ষীদের সামনে বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন। তার মোবাইলে এনামুলের ফেক আইডি ওপেন ছিলো। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের একটি এ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন টেক্সট ও লাখ লাখ টাকা লেনদেনের বিভিন্ন আলামত পাওয়া যায়। জেসমিন সুলতানাও তার প্রতারণার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন।

সাড়ে ১১টার দিকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আলামতসহ জেসমিনকে একটি কম্পিউটারের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। র‌্যাব সেখানে তার মোবাইলের বিভিন্ন আলামত প্রিন্ট করে। সব আলামত সংগ্রহের পর তাকে নিয়ে মামলা দায়েরের জন্য থানায় যাওয়ার পথে জেসমিন অসুস্থ বোধ করেন। এ অবস্থায় তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই হাসপাতালে প্রবেশ করেন। পরে তার স্বজন ও সহকর্মীদের ডাকা হয়। সবার সান্নিধ্যেই তিনি সেখানে চিকিৎসা নেন।

সন্ধ্যার দিকে তিনি ‘স্ট্রোক করতে পারেন’ এমন ধারনা করে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর র‌্যাব সদস্যরা তাকে রামেকে নিয়ে যায়। সেখানে সিটি স্ক্যান করে স্ট্রোকের আলামত দেখতে পান চিকিৎসকরা। এরপর সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তার মৃত্যু হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসক তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেছেন। ময়নাতদন্তেও বিষয়টি বের হয়ে আসবে। জেসমিনের কাছ থেকে প্রতারণার বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের পর ভুক্তভোগী এনামুল নিয়মতান্ত্রিকভাবে থানায় যান। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনি নিজে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে, হেফাজতে অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাই বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে, কমিটি কাজ করছে। আমাদের কোনো সদস্যের কোনো গাফিলতি আছে কি-না, কারো অনৈতিক কোনো ইনভলভ আছে কি না কমিটি খতিয়ে দেখবে।

তদন্ত যেহেতু সময় সাপেক্ষ, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হয়ে গেছেন, অপারেশনের কোনো দুর্বলতা আছে কি-না এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কোনো আলামত পাইনি। তদন্ত কমিটি কাজ করবে, কারো গাফিলতি পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

আদালত আমাদেরকে কিছু কোয়ারিজ দিয়েছেন। আমরা আমাদের বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করবো। তিনি বলেন, নওগাঁ হাসপাতালে নেওয়া হয় দুপুর ১টার দিকে। তাকে সাড়ে ১১টার সময় ভুক্তভোগীসহ সাক্ষীদের সামনে প্রাথমিকভাবে আটক করা হয়। আটকের পর আলামত যা পাওয়া যায় তা কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্টআউট করা হয়। এরপর থানায় যাওয়ার পথে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। আমাদের ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল রয়েছে, সেই সেলকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটে আঘাতের বিষয়ে উল্লেখ নেই। আমরা ডেথ সর্টিফিকেট দেখেছি, ডাক্তারের বক্তব্য শুনেছি। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখবো। এমন কোন ইনভলভমেন্ট পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(বিএস/এসপি/মার্চ ২৯, ২০২৩)