স্টাফ রিপোর্টার : বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বাজারে পণ্যের দাম বেশি। তবে প্রথম রমজানে পণ্যের দামে যে অস্বস্তি শুরু হয়েছিলো, তা এখন অনেকটা কেটে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগি, সবজি ও মাছের দাম।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর রামপুরা, মেরুল বাড্ডা ও মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

গত শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম উঠেছিল ২৮০ টাকা পর্যন্ত। এখন সে মুরগি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাবে ৪০০ টাকা ছুঁইছুঁই করা সোনালী মুরগির দামও কমে এখন ৩২০-৩৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি দেশি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০-৫০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৭০-৫০০ টাকা কেজি দরে।

মধ্যবাড্ডা বাজারে মুরগি বিক্রেতা সোনাল মিয়া বলেন, মুরগির বাজার পড়তি। করপোরেট কোম্পানিরা ১৯০ টাকায় মুরগি ছাড়ার (বিক্রি করার) পর থেকে কোনো সমস্যা নেই এ বাজারে। এরপর গত দুদিন থেকেও বাজার কম ছিল। পাইকারি ১৮০-ও গেছে। আজ তাও বৃষ্টির জন্য একটু টান আছে।

এদিকে বাজারে মাছের দামও প্রথম রোজার তুলনায় কেজিপ্রতি ২০-৫০ টাকা কম দেখা গেছে। এছাড়া সরবরাহ বেশি হওয়ায় মাছের দরও কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

একই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, প্রথম রোজায় সবকিছুর দাম তরতর করে বেড়েছে। মানুষ কিনেছেও বেশি। তিনি বলেন, এখন যে চাহিদা তার চেয়ে বাজারে প্রচুর মাছ এসেছে। যে কারণে দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।

যতদিন যাবে মাছের চাহিদা কমবে বলে জানান এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ঈদের মধ্যে রাজধানীতে মাছের চাহিদা প্রায় থাকেই না। সে কারণে এখন অনেকে মাছ বিক্রি করে দিচ্ছে।

তিনি জানান, বোয়াল মাছ এখন ৬০০ টাকা কেজি, তা কয়েক দিন আগেও ছিল ৭০০ টাকার বেশি। একইভাবে বড় রুই, কাতলা, মৃগেল ও কার্ফু মাছ ২৮০-৩০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলোর দাম গত সপ্তাহে আরও ২০-৫০ টাকা বেশি ছিল।

বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহও রয়েছে ভালো। এছাড়া বড় বড় পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ দেখা গেছে দোকানে দোকানে। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা দরে। একই পদের ছোট মাছের দরদাম করে নিলে ২০০ টাকার নিচেও মিলছে।

অন্যদিকে রামপুরার মামা ভাগিনা সবজি স্টোরের রহমান মিয়া জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দামও ১০-৩০ টাকা কমেছে।

তিনি বলেন, ভালো মানের বেগুণ রোজার প্রথম দিকে ১০০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন সেটা ৭০ টাকা। এর কমেও বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও। আবার ৮০ টাকার শসা এখন ৫০ টাকা হয়েছে। ৬০ টাকা লেবুর হালি এখন ৩০ টাকায় বিক্রি করছি।

রমজানের প্রথমদিন বেগুন, লেবু, শসার মতো ইফতারে প্রয়োজনীয় পদগুলোর দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এখন সেগুলোর দাম কিছুটা কমলেও বাজারে বেশ চড়া অন্যান্য পদের সবজির দাম।

খোদ বিক্রেতারাই বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা কমলেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দাম এখনো বেশি। পেঁপে আর আলু ছাড়া বাজারে ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। অনেক পদের দাম ১০০ টাকায় আটকে রয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেলো, এখন সজিনা, বরবটি ও কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। পটোল, ভেন্ডি, ঝিঙা, চিচিংগা, বেগুন, শসার দাম ৬০-৭০ টাকা। আর শিম, মুলা ও টমেটো প্রতিকেজি ৫০-৬০ টাকা।

সবচেয়ে কম দামের সবজি কোনটা জানতে চাইলে রামপুরা বাজারে বিক্রেতা আবদুল হানিফ বলেন, দাম অনেক বেশি ছিল, এখন কমতে শুরু করেছে। রোজার শেষে একদম কমে আসবে। কারণ ঈদে সবজির চাহিদা থাকে না।

এদিকে বাজারে অপরিবর্তিত দেখা গেছে, গরুর মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। রামপুরা ইনফাস মাংস বিতানের আবুল হোসেন বলেন, সবকিছুর দাম কমে গেলেও মাংসের দাম আর কমবে না, বরং ঈদের সময় চাহিদা বাড়ায় দামে টান থাকবে।

তবে বাজারে কিছুটা কমে ফার্মের ডিম প্রতি ডজন ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা শেষ সপ্তাহে ১৪০-১৪৫ টাকা উঠেছিল।

(ওএস/এসপি/মার্চ ৩১, ২০২৩)