স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়কে জন্ম নেওয়া শিশু ফাতেমার ব্যাংক হিসাবে জমা মূলধনের ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, প্রতি মাসে সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ থেকে শিশুটি ও তার পরিবার ভরণ-পোষণের জন্য খরচ করবে।

একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে এক মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েও সঞ্চয়পত্র কিনে দিতে বলা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ দিয়ে শিশু ফাতেমা, তার বোন জান্নাতুল, ভাই ইবাদত ও দাদির সংসারের খরচ মেটাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহাসিব হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহাসিব হোসেন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেওয়ার পর অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশুটি ও তার পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়কে জন্ম নেওয়া শিশুর ব্যাংক হিসাবে জমা মূলধনের ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকার লভ্যাংশ থেকে খরচের আর্জি জানানো হয়েছিল। এ বিষয়ে আদেশের জন্য ৩০ মার্চ দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। এর আগে গত ১২ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ দিন ঠিক করেন।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যুর আগ মুহূর্তে সড়কে জন্ম নেওয়া শিশুকে তাৎক্ষণিক এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিআরটিএ এবং দুর্ঘটনাকবলিতদের জন্য গঠিত কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে এ অর্থ শিশুর অভিভাবককে দিতে বলা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় শিশুটিকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা দেয় বিআরটিএ। এছাড়া ওই শিশুর জন্য করা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিআরটিএর পাঁচ লাখ টাকাসহ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া অর্থ মিলিয়ে মোট ১৩ লাখ ৫২ হাজার জমা হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে জমা থাকা মূল টাকার অংশ থেকে খরচ না করে অতিরিক্ত লভ্যাংশ খরচ করার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে।

শিশুটির আরও দুটি বোন ও তার দাদা-দাদি রয়েছে। শিশুটির ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকার মূলধন খরচ না করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেওয়া টাকা থেকে সঞ্চয়পত্র বা এফডিআরের মাধ্যমে প্রতি মাসে লভ্যাংশ থেকে খরচ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট ফেটে জন্ম নেওয়া শিশু ফাতিমার ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকা ‘রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক শিশু ও দুই সন্তানের সহায়তা হিসাবে’ জমা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক ত্রিশাল শাখায় এ টাকা জমা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক উল্লেখ করেন, ট্রাস্টি বোর্ড, বিআরটিএ তহবিল থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মা-বাবার নবজাতক শিশুর অভিভাবককে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত পাঁচ টাকার ক্রস চেক সোনালী ব্যাংক, ত্রিশাল শাখায় ‘রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক শিশু ও অপর দুই সন্তানের সহায়তা হিসাব’-এ জমা আছে।

তিনি জানান, এ টাকার পাশাপাশি অন্য ব্যক্তিদের দেওয়া টাকাও ওই অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। অ্যাকাউন্ট নম্বর ৩৩২৪১০১০২৮৭২৮, সোনালী ব্যাংক, ত্রিশাল শাখা। এই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন শিশুর অভিভাবক দাদা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ত্রিশাল। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। যৌক্তিক প্রয়োজনে শিশু ও তার পরিবারের কল্যাণের জন্য এই অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করা হবে।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর সড়কে জন্ম নেওয়া শিশুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে কি না, তা জানাতে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।

২০২২ সালের ১৬ জুলাই ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান ত্রিশালের রাইমনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার স্ত্রী রত্না বেগম (৩০) এবং মেয়ে সানজিদা খাতুন (৬)। মৃত্যুর আগে রত্না বেগম সড়কেই এক নবজাতকের জন্ম দেন। পরে নবজাতকের নাম রাখা হয় ‘ফাতেমা’।

জাহাঙ্গীর আলম সেদিন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে ত্রিশালে এসেছিলেন। সঙ্গে তাদের মেয়ে সানজিদাও ছিল।

ওই ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ত্রিশাল থানায় একটি মামলা করেন। প্রথমে তিনি রত্নার রেখে যাওয়া নবজাতকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। একটি বেসরকারি হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা দেওয়ার পর গত বছরের ১৯ জুলাই শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর ১০ দিন পর ২৯ জুলাই শিশুটির দাদা বাবুল ও অন্য স্বজনরা রাজধানীর আজিমপুরে শিশুদের পুনর্বাসনকেন্দ্র ছোটমণি নিবাসে রেখে যান মেয়েটিকে।

(ওএস/এসপি/মার্চ ৩১, ২০২৩)