লিটন শরীফ : ‘স্যার নাই, আমাদের কে পড়াইত, দূর্গম পাহাড়ী এলাক্য়া আমাদের জন্ম কি অপরাধ, কেউ আমাদের খবর নেন না, আর কয়দিন পর আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ,পরীক্ষায় খাতায় কি লিখব জানি না।’ এমন অনুযোগ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিন শাহবাজপুর ইউনিয়নের দূর্গম পাহাড়ী এলাকা বোবারতল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের।

আট জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক সহ মাত্র দুই জন শিক্ষক রয়েছেন। তন্মধ্যে সহকারী শিক্ষিকা মুক্তিযোদ্ধার কোঠায় কুষ্টিয়া জেলা থেকে এক বছর আগে আসলেও তিনি ও মহাপরিচালক থেকে বদলী আদেশ নিয়ে নিজ জেলায় যাওয়ার জন্য বসে আছেন। এদিকে সম্প্রতি শিক্ষক সংকট দূরীকরনের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটি তিনজনকে ডেপুটেশনে যোগদানের নির্দেশ দিলেও একজন যোগদান করলেও অপর দুইজন এখনও পর্যন্ত যোগদান করেননি। শিক্ষক সংকটের কারনে বোবারতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বড়লেখা উপজেলা থেকে প্রায় ১৫কিলোমিটার দূরে পাহাড়ী ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে দূর্গম পাহাড়ী এলাকা বোবারতল এলাকার ষাটঘরী গ্রামে বোবারতল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। ভৌগিলকগত কারনে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর না হওয়ায় সেখানে কোন শিক্ষকই যেতে চান না । আর যারা নিয়োগ পান তারা ও দুই-তিনমাসের মধ্যে বদলি হয়ে যান। ফলে এ স্কুলে শিক্ষক সংকট সব সময়ই দেখা দেয়। মাত্র দুইজন শিক্ষকের পক্ষে ৪৮২জন শিক্ষার্থীদেরকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিক্ষক স্বল্পতার কারনে শিশু শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রেনী কক্ষের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন

স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নাসরিন বেগম, ইমা বেগম, শাহিন আলম ও রাসেল আলম এবং চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী আবুল হোসেন, তানজিলা বেগম, হোসনে আরা বেগম সহ অন্যান্য ক্লাসে শিক্ষার্থীরা জানান, ‘স্যার না থাকায় ক্লাসে সঠিকভাবে লেখাপড়া হচ্ছে না, বার্ষিক পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল নিয়ে তারা চিন্তিত রয়েছেন। তবে অতিদ্রুত শিক্ষক সমস্যা সমাধান করা হলে ক্লাসে নিয়মিত পড়াশোনা করানো হলে তারা ভালো ফলাফল করতে পারবেন বলে জানান।’

স্কুল পরিচালনা কমিটি সভাপতি আব্দুল লতিফ ক্ষোভের সুরে অভিযোগ করে জানান, ‘বোবারতল এলাকায় আমাদের সন্তানের জন্ম গ্রহন করাই কি অপরাধ। বোবারতলে নামের কারনেই কি আমাদের কোমলমতি সন্তানেরা লেখাপড়ায় বোবা থাকবেন।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস শুক্কুর জানান, ‘আটজন শিক্ষকের পদে তিনি সহ দুইজন কর্মরত রয়েছেন। মাসিক সম্বন্বয় সভা ও অফিসিয়াল কাজে তিনি বড়লেখায় চলে আসলে সেদিন একজন সহকারী শিক্ষককে স্কুলের সমস্ত কিছু সামাল দিতে হয়। শিক্ষক না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার চরম ব্যাঘাত হচ্ছে। কর্মরত সহকারী শিক্ষিকা মালেকা খাতুন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কুষ্টিয়া জেলা থেকে বছর খানেক আগে যোগদান করলেও গত জুন মাসে নিজ জেলায় বদলির জন্য মহাপরিচালক, ঢাকা থেকে বদলীর আদেশ করে রেখেছেন। নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলেই তিনিও চলে যাবেন। শিক্ষক সংকটের কথা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মোঃ শাহাব উদ্দিন , উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দরসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার থেকে শুরু করে উধ্বর্তন মহলে আমি লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমার আবেদনের কারনে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিনজন সহকারী শিক্ষককে ডেপুটেশনে চলতি অক্টোবর মাসের ১২ তারিখে স্কুলে যোগদানের নির্দেম দেন। তন্মধ্যে ডেপুটেমনে শাহাদত হোসেন কাশেম যোগদান করলেও অপর দুই শিক্ষক নাজিম উদ্দিন ও আব্দুল হান্নান অদ্যাবধি যোগদান করেননি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হেমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ উক্ত স্কুলে শিক্ষক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ‘ডেপুটেশনে তিনজন শিক্ষকের মধ্যে একজন যোগদান করেছেন । অপর দুইজন শিক্ষক লিখিতভাবে পারিবারিক অসুবিধার কথা জানিয়ে যোগদানের অপরাগতা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করে প্রযোজনীয ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুন্দর জানান, শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক সংকট দুরীকরনে তিন মাস অন্তর অন্তর ডেপুটেশনে সেখানে শিক্ষক দেওয়া হবে। তবে কি কারনে ডেপুটেশনে দুই জন শিক্ষক যোগদান করেন নাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

(এলএস/এটিআর/অক্টোবর ২৪, ২০১৪)