রহিম আব্দুর রহিম 


কোভিড -১৯ মহামারীকালে 'বাংলাদেশ-ভারত' এর সকল ল্যান্ডপোর্ট ২০২০ সালের ১৩ মার্চ স্থগিত হয়েছিলো। কোভিড মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসার পর ২০২২ সালের এপ্রিলে পুনরায় ভারত-বাংলাদেশের সকল পোর্ট চালু হলেও স্থগিত থেকে যায় বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন। এতে করে নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার ভারত ভ্রমণকারীরা মহাবিপাকে পরে। কেউ জানে না স্থগিত থাকার কারণ। পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট হতে থাকে নিয়মিত। কেউ আর বিষয়টি ভারতের উচ্চ পর্যায়ে জানানোর জন্য এগিয়ে আসেনি।

২০২২ সালের ৮ আগস্ট একটি আবেদন ভারতের হাইকমিশনার ঢাকা বরাবর তাদের ই-মেইল পাঠাই। প্রায় তিনমাস গত হলেও কোন ফলাফল আসেনি। এরপর ২০২২ এর ২৫ ডিসেম্বর সশরীরে ভারতের হাইকমিশন ঢাকায় যোগাযোগ করি। পরামর্শ পাই, আবেদনটি সহকারি হাইকমিশন রাজশাহী হয়ে সাবমিট করতে হবে। ওইদিন রাতেই ট্রেনে ঢাকা থেকে রাজশাহী। ২৬ ডিসেম্বর বেলা পৌনে বারোটা দিকে সহকারি হাইকমিশনার (রাজশাহী) ভারতের মনোজ কুমার মহোদয়ের সাথে সশরীরে সাক্ষাৎ করি এবং বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন পুনরায় চালুর জোর অনুরোধসহ একটি আবেদন হস্তান্তর করি। তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখেন এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বলে ঢাকা হাইকমিশন বরাবর পত্র পাঠান, যে পত্রটি, ঢাকা হাইকমিশনার দিল্লিতে পাঠান, দিল্লি থেকে আবেদন চলে আসে পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা সংস্থায়।

গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক রিপোর্ট হলেও পোর্ট চালুতে কোন ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করা যায় নি। পরে ২৯ মার্চ ২০২৩ পুনরায় আবেদন পাঠায় সহকরি হাইকমিশনার বরাবর।

৩ এপ্রিল সোমবার সহকারি হাইকমিশনার মনোজ কুমার বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পোর্ট পরিদর্শন করেন এসময়ে তিনি বলেন, "এই ইমিগ্রেশন হয়ে যারা ভারত যেতে আগ্রহী তারা অন লাইনে আবেদন করতে পারেন।"

এর আগে তিনি ঠাকুরগাঁও ভিসা সেন্টার পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন, "কোভিডকালীন স্থগিত ঘোষিত ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পোর্ট, ঈদের আগেই যাত্রীরা পারাপার হতে পারবেন।"

আবেদনকারীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, "আপনারা যারা মানি ইন্ডোস করতে পারবেন না, তারা ব্যাংক স্টেটম্যান্ড দেবেন, এতেও যদি সমস্যা হয়, তবে অনলাইন আবেদনের সাথে পরিচয় পত্র, বিদ্যুৎ বিল অথবা পানির বিল পরিশোধের রশিদের ফটোকপি দিলেই চলবে। কোনভাবেই তৈয়ার করা কাগজপত্র আবেদনের সাথে সাবমিট করবেন না।"

পরে তিনি ভিসা সেন্টারের আশেপাশে অনলাইন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন, "মানি ইন্ডোস এবং অনলাইন আবেদনসহ দুই থেকে তিন হাজার টাকা নেওয়া হয় বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এই ধরণের অভিযোগ প্রমাণ হলে ভিসা সেন্টারের আশেপাশের অনলাইন ব্যবসা সরিয়ে দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করতে বাধ্য হবো।"

পরে তিনি বাংলাবান্ধা পরিদর্শন শেষে তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোতে আসেন। সেখানে তাঁর সাথে ভিসা প্রাপ্তি আরও সহজকরণের বিষয় তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, "অপাপ্ত বয়ষ্করা তাদের, শিক্ষক, সংগঠক বা নিকট আত্মীয়ের সাথে ভারত ভ্রমণ করতে পারবে, এক্ষেত্রে ভিসা আবেদনে সাথে ভারত ভ্রমণে আগ্রহী ওই শিশুর বাবা এবং মায়ের সম্মতিপত্র সাধারণ কাগজে কম্পোজ করে সাবমিট করলেই হবে। যাদের বাবা -মা বেঁচে নেই, তাদের আইনানুগ অভিভাবক সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করবেন, কোনক্রমেই ব্যয়বহুল কোর্ট এফিডেভিটের প্রয়োজন নেই।

লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সংগঠক।