শেরপুর প্রতিনিধি : নানা জল্পনা-কল্পনা’র পর শেরপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটিতে ঘুরে-ফিরে সেই পুরণো মুখগুলোই ঠাঁই পেয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে আলোচিত হচ্ছে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়া শেরপুর মডেল গার্লস কলেজের শিক্ষক একেএম মামুনুর রশীদ পলাশের নাম। পলাশ জেলা বিএনপি’র প্রয়াত সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম কালামের ছেলে।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, বিগত প্রায় ছয় বছরে সরকারী বিরোধী আন্দোলন কিংবা কেন্দ্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে মাঠে দেখা যায়নি জেলা বিএনপিকে। তবে তারা ঠিকই ব্যস্ত ছিলো দলীয় গ্রুপিংয়ে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তাদের দলীয় গ্রুপিং এবং আন্দোলনের মিছিল-মিটিং, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর, প্রতিপক্ষের সভা পন্ড, পাল্টা-পাল্টি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। মিডিয়া কর্মীদের হাতে কাগজ তুলে দিয়ে এক পক্ষ অপরপক্ষকে বহিস্কারের ঘটনাও ঘটেছে। তবে জেলা বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পুলিশের উপর দোষ চাপিয়েই খালাশ পেলেও বিএনপি বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বরাবরই দুষছিলেন জেলা বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরকেই।

জেলা বিএনপি’র একটি সূত্র জানায়, বিগত সোয়া ৫ বছরে বিএনপি’র বিভিন্ন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হলেও কমপক্ষে ১০/১২ টি মামলা হয়েছে দলীয় গ্রুপিং এর কারণে। জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম কালাম প্রায় দেড় বছর আগে মারা যান। তখন সাবেক পৌরপতি আব্দুর রাজ্জাক আশীষকে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মাঝেই শেরপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়নের টোপ দিয়ে এক শিল্পপতির আবির্ভাব ঘটে জেলা বিএনপি’তে। এমনিতেই তপ্ত হয়ে থাকা দলীয় কোন্দল এতে আরো প্রকট হয়ে ওঠে। শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম স্বপন প্রয়াত নেতা কালামের ছেলে মামুনুর রশীদ পলাশকে সাথে নিয়ে মাঠে নামেন। এতে বিএনপি’র দুই গ্রুপ মুখোমুখি হয়ে ওঠে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃতৃন্দের কয়েকটি কর্মসূচীও বানচাল হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জেরবার শেরপুর জেলা বিএনপিতে প্রাণসঞ্চরের লক্ষে অবশেষে বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়া পুরাতন কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।

সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় শেরপুর জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। পরে জেলা বিএনপি’র কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে তিনি নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। এসময় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ৮ সদস্যের এ আহ্বায়ক কমিটি’র আহ্বায়ক মনোনীত হয়েছেন জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শেরপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল।

এছাড়া অন্য যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন-জেলা বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক আশীষ, সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ বাদল, সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম স্বপন, বিএনপি নেতা আওয়াল চৌধুরী, প্রয়াত সাবেক হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে ও নকলা উপজেলা বিএনপি নেতা ফাহিম চৌধুরী, ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, নালিতাবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান রিপন ও জেলা বিএনপি’র প্রয়াত সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম কালামের ছেলে বিএনপি নেতা একেএম মামুনুর রশীদ পলাশ।

নতুন কমিটি’র ব্যাপারে আহবায়ক মাহমুদুল হক রুবেল জানান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলকে নতুন করে সাজাতে শেরপুর জেলা বিএনপি’র যে কমিটি ঘোষনা করেছেন তাতে আমরা জেলা বিএনপি সাধুবাদ জানাই। আমরা দুই এক দিনের মধ্যে নিজেদের মধ্যে সকল ভেদাভেদ ভুলে আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ৫১ সদস্যের বাকী সদস্যের নাম ঘোষনা করবো এবং বিএনপি নতুন করে আগামী আন্দোলনে শক্তিশালী ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবো বলে আমারা আশা করি।

(এইচবি/এটি/এপ্রিল ২৯, ২০১৪)