আসাদ সবুজ, বরগুনা : 'মোগো ঈদের জামা কিন্না দেবা না, মোরা কি নতুন জামা গায়ে দিমু না' বরগুনা মাছবাজরের সামনে এক বৃদ্ধা কিছু কলা আর শাক বিক্রি করছেন পাশে তাঁর তিন নাতিরা এভাবেই করজোড়ে দাদিকে বলছিলো কথাগুলো।

বরগুনার সদরের বালিয়াতলী গ্রামে আনোয়ারা বেগমের(৫৫) বসবাস। দীর্ঘ তিনটি বছর ধরে কঠিন পরিশ্রম করে আসছে এই অসহায় নারী।

বালিয়াতলী গ্রামের দিনমজুর ছত্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু আনোয়ারার বেশিদিন সংসার করা হয়নি ।

দুই সন্তান নিয়ে ৩৫ বছর আগেই স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয় সে। বড় ছেলে মাসুদ বিয়ে করে আলাদা ঘর সংসার করছে।

ছোট ছেলেকে নিয়ে সুখেই ছিলো আনোয়ারা বেগম। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন আর কাটলো না। বালিয়াতলি ব্রিজের উপারের গাছের ডাল কাটতে উঠে বিদুৎস্পষ্ট মারা যায় আনোয়ারার ছোট ছেলে সোহেল ।
সোহেলের স্ত্রী খাইরুন ও তিন সন্তান দিন ইসলাম, নূর ইসলাম ও আল ইসলাম দেখাশুনার ভার নেন এই বৃদ্ধো মহিলা।

কাক ডাকা সকালে গ্রামে কুড়ানো শাক সবজি ও ফল সংগ্রহ করে বরগুনা বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্য। সারা দিন তীব্র রোদে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যা বিক্রি হয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। রোদ বৃষ্টি যাই হোক প্রতিদিন সকালে ছুটে আসতে হয় নাতিদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেবার জন্য।

রোজা শেষে ঈদ আসছে, তিন নাতিকে নতুন পোশক দিতে হবে। বর্তমানে জামা কাপড়ের যে দাম তাই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ সেখানে আনোয়ারা বেগম তো বড় অসহায়!
তদুপরি, নাতিরাও নাছোরবান্দা!

দাদির সাথে তাই আজ শহরে এসেছে ইদ জামা কিনবে বলে।

'তিন নাতি ও এক পুত্রবধু সহ পাঁচ সদস্য এই পরিবারে। চাল, ডাল ও লবন কিনতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের আবার ঈদের আনন্দ!'

বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আনোয়ারা বলছিলো 'যদি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যেত তবে নাতিদের নিয়ে মোটামুটি ঈদটা কাটতো।

শহরে স্বচ্ছল ও দানবীরদের যারা আছেন তারা যদি আনোয়ারা বেগমের পাশে একটু সহয়তার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে এই অসহায় বৃদ্ধার দুঃখ-দুর্দশা একটু হলেও কমতো। ঈদের খুশি ও দোয়ায় বরকতে প্লাবিত হতো উপকূলের আকাশ।

(এএস/এএস/এপ্রিল ১৩, ২০২৩)