স্টাফ রিপোর্টার : তড়িঘড়ি করে চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু করে সরকার। নতুন এ শিক্ষাক্রমে নানা ভুল, অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তিকর তথ্য আসার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমালোচনার মুখে শিক্ষাবর্ষের চার মাসের মাথায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২২টি বইয়ে ৪২১টি ভুল পায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সবশেষ এসব ভুল সংশোধন করে শুক্রবার এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

শিক্ষকরা বলছেন, এই চার মাস এসব ভুল বই পড়াতে পারেননি তারা। এখন সংশোধিত পাঠ্যবই বাকি সময়ে শেষ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

কোন বইয়ে কত সংশোধনী

সংশোধনীগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২০১টি ভুলের সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি। এরমধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি সংশোধনী ৭০টি, আর সবচেয়ে কম বাংলা বইয়ে ৪টি।

এছাড়া ইংরেজি বইয়ে ৩৫, গণিতে ৫, বিজ্ঞান ৭, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৩৬, ডিজিটাল প্রযুক্তি ১, জীবন ও জীবিকা ১৫, শিল্প ও সংস্কৃতি ৫, ইসলাম শিক্ষা ৭ এবং হিন্দু শিক্ষা বইয়ে ১৬টি সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।

আর সপ্তম শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২২০টি ভুলের সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৫টি ভুলের সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। বাংলা বইয়ে ২০, ইংরেজি ১১, গণিত ২৩, বিজ্ঞান ৪, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ২৫, ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫, জীবন ও জীবিকা ২৮, ইসলাম শিক্ষা ৯, হিন্দু শিক্ষা বইয়ে ১২টি সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি।

যে রুটিনে পড়াবেন শিক্ষকরা

ষষ্ঠ ও সপ্তাহ শ্রেণির নতুন সংশোধনী কীভাবে পড়াবেন তার একটি রূপরেখা দিয়েছে এনসিটিবি। এগুলো হলো-

>> রোল কলের কারণে প্রথম পিরিয়ড হবে ৬০ মিনিটের এবং বাকি পিরিয়ড হবে ৫০ মিনিটের।

>> প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবশ্যই প্রতিদিন সমাবেশে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীত গাইবার ব্যবস্থা করবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী শরীর চর্চা, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির উপস্থাপনা যেমন গান, নাটক, আবৃত্তি, নাচ, প্রভৃতি অন্যান্য আয়োজন করতে পারে। এ লক্ষ্যে সমাবেশের সময় বাড়াতে হলে প্রয়োজনে বিদ্যালয় শুরুর সময় এগিয়ে আনা যাবে। কিন্তু কোনো মতেই সেশনের সময় কমানো যাবে না।

>> রুটিনে উল্লেখিত কোনো বিষয়ের সেশন সংখ্যা বা ক্রম পরিবর্তন করা যাবে না।

>> জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, পহেলা বৈশাখ, ১ মে, ১৫ আগস্ট, ১৬ ডিসেম্বর) শিখনকালীন কার্যক্রম হিসেবে ধরা হয়েছে। জাতীয় দিবসে সেশন রুটিন অনুসরণ না করে, দিবস পালনে বিভিন্ন বিষয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকরা আগে থেকেই পরামর্শ করে শিক্ষক সহায়িকার নির্দেশনা অনুসরণ করে বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবসের কার্যক্রম সাজাবেন। যাতে করে এসব দিবস পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা প্রয়োজন তা অর্জিত হয়।

>> প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সেশন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। একটি শ্রেণির একটি বিষয়ে একজন শিক্ষককেই দায়িত্ব দেওয়া যাবে। একই শ্রেণির একই বিষয়ে একাধিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। যে শিক্ষক যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তাকে সে বিষয়ের সেশন, শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে।

এদিকে পাঠ্যবইয়ের ভুলভ্রান্তি চিহ্নিত করে সংশোধন এবং এতে কারও কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুটি কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এরমধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম। আর প্রশাসনিক কমিটির প্রধান করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় বিশেষজ্ঞ কমিটি।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৯, ২০২৩)