মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের দুর্গম বাঘাছড়া চাবাগানে খাবার নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে মাদকাসক্ত ছেলের দায়ের কোপে নির্মম খুন হয়েছেন এক চা শ্রমিক বাবা। 

পাশবিক এ ঘটনায় গোটা এলাকায় চলছে তোলপাড়। সোস্যাল মিডিয়ায়ও বইছে নিন্দা আর সমালোচনার ঝড়। ছেলের হাতে খুন হওয়া ওই হতভাগা পিতার নাম রবি পাশী (৫০)। আর ঘাতক ছেলের নাম লুকেশ পাশী (৩০)।

রবিবার ( ৩০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাঘাছড়া চাবাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়েই আশপাশের স্থানীয় জনতা ঘটনাস্থল থেকে পালানোর আগেই ঘাতক ছেলেকে আটক করে পরবর্তীতে পুলিশে সোপর্দ করেন। খুন হওয়া রবি পাশী বাঘাছড়া চাবাগানের ৭ নং লাইনের সর্দার ছিলেন বলে জানা যায়।

কমলগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, বেকারত্বের পাশাপাশি মাদকে আসক্ত ছিলো ঘাতক ছেলে লুকেশ পাশী। রবিবার রাতে খাবার খেতে চাইলে মাদক সেবনের কারণে পিতা রবি পাশী ছেলে লুকেশ পাশীকে বকাঝকা করেন। এবং ঘরে থাকা মেয়েকে নিষেধ করেন খাবার দিতে। এ নিয়ে পিতা-ছেলের মধ্যে শুরু হয় কথা-কাটাকাটি। বকাঝকা করার সময় বাবা রবি পাশী খাটের বিছানায় শুয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে লুকেশ উত্তেজিত হয়ে ঘরের মধ্যে থাকা ধারালো দা দিয়ে বাবা রবি পাশীর গলায় কোপ দিলে তাতে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। এ সময় ঘরের মানুষের চিৎকারে আশপাশের লোকজনও জড়ো হতে থাকেন। এর পর জড়ো হওয়া লোকজন ঘাতক লুকেশকে অটক করেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত ১১ টার দিকে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক থাকা ওই ঘাতক ছেলেকে রাত ১২টার দিকে থানায় নিয়ে আসেন।

এদিকে ধারালো দায়ের কোপে রবি পাশীর শরীরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় নিজ ঘরেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া।

সোমবার (১মে) দুপুরের দিকে মুঠো ফোনে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাতে স্থানীয় গুলের হাওর বাজারে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় ওই বাগানের পঞ্চায়েত প্রধান রাখাল গোয়ালার মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘাতক ছেলেকে ধরতে প্রথমেই পুরো বাগান ঘেরাও করি। এর পর তাঁকে আটক করে রাতেই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।

কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড এ বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ছেলে মাদকাসক্ত ও বেকার। রাতে খাবার খেতে চাইলে বাবা তাঁর ছোট মেয়েকে নিষেধ করেন তাঁকে খাবার না দিতে। এ নিয়েই মূলত ঘটনার সূত্রপাত।

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সোমবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। কথা-কাটাকাটির জেরেই ছেলের হাতে বাবা খুনের এই ঘটনা বলেও প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

(একে/এসপি/মে ০১, ২০২৩)