সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : এক সময়ের খরস্রোতা সুতি নদীর বুক কেটে নদীর ভেতর মাছ চাষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে বড় বড় গর্ত। স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় যেগুলোকে পাগার। এক শ্রেণির অসাধু প্রভাবশালী লোকজন ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে নদীর গতি প্রবাহ রোধ করে মাছ চাষ করার জন্য নদীর ভেতরই বড় বড় পাগার তৈরি করছেন। তারা নদীতে গর্ত করে এক দিকে যেমন পানির গতি প্রবাহ রোধ করছেন, অপর দিকে নদীতে বড় বড় গর্ত করার ফলে নদী ভরাট হয়ে গিয়ে নদীর রূপ পাল্টে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ওই নদীর রক্ষনাবেক্ষন না থাকায় নদীর পানি দিয়ে যেমন কৃষকের সেচ কাজ ব্যহত হচ্ছে তেমনি ব্যহত হচ্ছে নৌ চলাচলও। 

কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া মোজাফরপুর ও চিরাং ইউনিয়নের অপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এককালের খরস্রোতা সুতি নদী এখন মৃত প্রায়। এক সময় ওই নদী দিয়ে সারা বছর নৌকা চলাচল করত এবং নৌ পথেই তাড়াইল কিশোরগঞ্জ থেকে চিরাং বাজারে বিভিন্ন পন্য পরিবহন করা হতো। তাছাড়া সারাবছরই প্রকৃত জেলেরা এই নদীতে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে নদীর অবস্থা খুবই করুন। গত ২ বছর আগে নদীটি খনন করে খাল বানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ঠিকাদারগণ নামে মাত্র নদী খনন করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, এই নদীর পানি দিয়ে আমরা এক সময় বুরো জমিতে সেচ দিতাম। কিন্তু নদীতে খুব একটা পানি না থাকায় এখন সেই সেচ কাজ দেয়া সম্ভব হয়না। এতে বিকল্প উপায়ে সেচের পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে কৃষকদেরকে অনেক অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হয়। তাছাড়া নৌ পথেও এখন আর কোন পন্য পরিবহন করা যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিড়াং গ্রামের এক কৃষক বলেন, যার শক্তি বেশি তার নদীতে দখলও বেশি পাগারও বেশি। তারা নদীতে পাগার দিয়ে মাছ চাষ করে নিজেরা লাভবান হয়, কিন্তু ক্ষতি করে দশের।

মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও পাইকুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কর ভূঞার বলেন, নদীতে কিছুদিন আগে মজলিশপুর গ্রামের অংশে যেসব বড় বড় গর্ত দেওয়া হয়েছিল সেগুলোকে দরবার শালিসের মাধ্যমে কৃষকের সুবিধার্থে ভ্যাকু দিয়ে কেটে সমান করে দেয়া হয়েছে। সুতি নদীর অন্যান্য অংশে গর্ত আছে কিনা তার জানা নেই। তবে থাকলে সেগুলোও ভেঙে ফেলা দরকার।

পাইকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ ইসলাম উদ্দিন বলেন, নদীর ভেতর কিছু ব্যক্তি মজলিশপুর এলাকায় পাগার দিয়েছিলেন। স্থানীয় শালিসির মাধ্যমে নদী রক্ষায় ও কৃষকের সেচ কাজের সুবিধার্থে ভ্যাকু দিয়ে সেগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি নদীতে পাগার না দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।

সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন সমকালকে বলেন, নদীর ভেতর ব্যক্তি স্বার্থে বড় বড় গর্ত করে পানির গতিপ্রবাহ রোধ ও ভরাট করা আইন বিরুদ্ধ কাজ। এটা যারা করছেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

(এসবি/এসপি/মে ০১, ২০২৩)