এটিএম রাশেদুল ইসলাম, বগুড়া : বগুড়া পৌরসভার কটনমিল এলাকায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে একটি অসহায় বাচ্চাকে খুঁজে পায় স্থানীয় এলাকাবাসী। রবিবার (৩০ এপ্রিল) বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তীর নিকট হস্তান্তর করে। আজ সোমবার দুপুরে আইনগত প্রক্রিয়ায় বগুড়া সদর থানা হতে বাচ্চাটিকে তার পিতা-মাতার নিকট হস্তান্তর করা হয়।

কটনমিল এলাকার অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কটনমিল এলাকায় রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে কাঁপছিল বাচ্চাটি। এমন সময় একজন সচেতন বাসিন্দা বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তীর অফিসে পৌঁছে দেয়। এরপর কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তী নিজ উদ্যোগে স্থানীয় থানা-পুলিশকে অবহিত করেন এবং মাইকে প্রচারের ব্যবস্থা করেন। একইসঙ্গে তিনি ফেসবুকে বাচ্চাটির তথ্য প্রচারে সাংবাদিকসহ অনেকের সহযোগিতা গ্রহণ করেন। ব্যাপক প্রচারের কারণে আজ খুঁজে পাওয়া যায় বাচ্চাটির পিতা-মাতাকে। বাচ্চাটি পিতা-মাতাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে।

মায়ের ভাষ্য মোতাবেক বাচ্চাটির নাম ওমর ফারুক, মাতার নাম শাবানা এবং পিতা (২য়) মহন। তারা বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দির কুতুবপুরের স্থায়ী অধিবাসী। বর্তমানে তারা বগুড়া শহরের নারুলি এলাকায় ভাড়া থাকেন। বাচ্চাটির মা শাবানা'র ভাষ্য মতে, রবিবার (৩০ এপ্রিল ২০২৩) সকাল নয়টা হতে সন্তানকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

কাউন্সিলর অফিসে বাচ্চাটির মা শাবানাকে জিজ্ঞাসাবাদে সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। বাচ্চাটির মা শাবানার ভাষ্য মতে, প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর মহনকে দ্বিতীয় বিয়ে করে বাচ্চাটিকে নিয়ে সংসার করছিলেন। বাচ্চাটি তার প্রথম পক্ষের। পূর্বের স্বামীর কোনো তথ্য বর্তমানে তার জানা নেই। রবিবার সকাল নয়টা থেকে বাচ্চাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না৷ টাকা না থাকায় এবং কোথাও টাকা ধার না পাওয়ায় বাচ্চাটিকে খুঁজতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছিলেন না। তারপর এক আত্মীয়ের সিএনজি ভাড়া নিয়ে সারিয়াকান্দি চলে যান। বাচ্চাটিকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা এবং পিতা-মাতাকে খুঁজে দেয়ায় কাউন্সিলর তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

বাচ্চাটির পিতা-মাতাকে খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বগুড়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, 'বাচ্চাটির অভিভাবকত্বে পিতা-মাতাকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে৷ সন্তানের অভিভাবকত্বে তাদের মাঝে উদাসীনতা দেখা গেছে, যা কোন অভিভাবকের নিকট কাম্য নয়। পিতা-মাতার উদাসীনতায় সন্তানের শারীরিক-মানসিক বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এই ঘটনাতেও তাই দেখা গেছে। যা দুঃখজনক।'

স্থানীয় সমাজসেবক শামীম আহম্মেদ বলেন, 'অসহায় বাচ্চাটিকে দেখে খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কোন পিতা-মাতা এভাবে বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়ে রাখতে পারে তা কল্পনাতীত। বাচ্চাটি তার মায়ের প্রথম পক্ষের সন্তান। নতুন সংসারে মা শাবানা তার বাচ্চাটির প্রতি অভিভাবত্বে উদাসীনতা দেখিয়েছে। না হলে এমন ঘটনা ঘটতো না। বাচ্চাটি অবশেষে তার পিতা-মাতার সন্ধান পেয়েছে এবং বাড়ি ফিরে যাচ্ছে এজন্য ভালো লাগছে। অভিভাবকত্বের উদাসীনতায় কোন সন্তানের জীবনে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে"।

(এটিআর/এসপি/মে ০১, ২০২৩)