নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : ধরো, টাকা নেও আর ছাড়ো! জরিমানার সব অর্থই কি সরকারি কোষাগারে সঠিকভাবে জমা হয়? জরিমানা আদায়কৃত টাকা কোথায় যায়, কিভাবে চলছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ডাম্পিং বিভাগে? সরকারি কোষাগার থেকে কোন বেতন দেয়া হয় কি রেকারের সাথে থাকা লোকদের? এইরকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। শহর কে যানজট মুক্ত করতে জেলা ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি রয়েছে রেকার টিম। ৪টি রেকার টিম প্রতিদিন শহরে প্রবেশ নিষেধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা আটক করে ডাম্পিংয়ে নিয়ে যায় এরপর জরিমানা করে ছেড়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা বলেন, সব গাড়িরই বিল হয় কিন্তু অনেক গাড়ির চালককে রশিদ দেয়া হয় না। যার ফলে এই অবৈধ অটোরিকশা গুলো পূনরায় শহরে প্রবেশ করে। যে কারনে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ও যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নারায়ণগঞ্জবাসী। এর শেষ কোথায়?  কেউই জানে না। এই যানজট থেকে মুক্তি ও স্থায়ী সমাধান চায় নগরবাসী।

সরজমিনে দেখা যায়, এক টিম যার নেতৃত্ব দেন এটিএসআই আবুল বাশারের টিমে একজন কনস্টেবল রয়েছে। কিন্তু এছাড়া প্রতিদিন বেতনে আরো ৪-৫ জন কাজ করে। ৪টি রেকার টিম শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ অটোরিকশা গুলোকে আটক করে কলেজ রোড এলাকায় অবস্থিত ডাম্পিংয়ে নিয়ে আসে। তারপরই চলে জরিমানার নামে অর্থ আদায়। এছাড়াও অটো রিক্সা চালকদের উপর চলে অত্যাচার।

তথ্য মতে জানা যায়, রেকার টিমের সাথে যারা গাড়ি দরে তাদের জনপতি প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পযর্ন্ত বেতন দেয়া হয়। হাতে গোনা কয়েকজনকে ট্রাফিক বিভাগ থেকে বেতন দেয়া হলেও বেশির ভাগ লোকদের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে কোনো বেতন দেয়া হয় না। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় এদের বেতন দেয়া হয় কোথায় থেকে?

ডাম্পিং থেকে গাড়ি বের করার সময় চালক গুলজারের কাছে রেকার রসিদ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ৭০০ টাকা দিয়ে গাড়ি বের করছি। টাকা রাখছে কিন্তু বিলের কোন রসিদ দেয়নি। তিনি আরো বলেন, তার গাড়ির সাথে আরো তিনটি গাড়ির থেকে ৭০০-৮০০ টাকা রেখে স্লিপ না দিয়েই গাড়ি বের করে দিয়েছে।

বেশ কয়েকজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক জানান, যেসব গাড়ি ধরা হয় সব গাড়ি বিল করা হয় না। সব গাড়ির যদি বিল করে তাহলে তো তাদের পকেটে টাকা ঢুকবে না।

চালকেরা আরো বলেন, শহরে যে পরিমান গাড়ি চোর বাড়ছে তাতে গাড়ি চালানো অনেক কঠিন। আর তারা তো পুরা দল বেধে গাড়ি ধরতে আসে। কে চোর আর কে পুলিশের লোক তাই বুঝা অনেক কঠিন। তারা আরো বলেন, গাড়ি পুলিশ এসে ধরে না, যে গাড়ি গুলো জরিমানা করার জন্য ধরে সেই চালক দিয়েই আবার তারা গাড়ি ধরায়। তারা অবৈধ গাড়ি ধরতে আসে অবৈধ গাড়িতে করেই।

অনুসন্ধান করে আরো জানা যায়, এটিএসআই আবুল বাশার ও তার টিম প্রতিদিন প্রায় ৪০ টির গাড়ি আটক করে। কিন্তু বিল হয় কয়েকটির আর বাকি গাড়ির চালকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরকারি রসিদ না দিয়েই গাড়ি ছেড়ে দেয়া হয়। যে কারনে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য ডাম্পিংয়ে গেলে রেকার অপারেটররা কাজ আছে বলে দৈনিক বেতন ভুক্ত কর্মচারীদের রেখে চলে যায় এবং ফোনে ফোনে কিভাবে কি করতে হবে বলে দেয়। যেসব গাড়ি গুলো থেকে টাকা নিয়ে রশিদ ছাড়া ছেড়ে দেওয়া হয় সেসব গাড়িগুলো গাড়ি ধরার কাজে ব্যবহৃত হয় তাই বিল ছাড়া ছেড়ে দয় বলে জানা যায়। কিন্তু তার অগোচরে থেকে যায় আসল রহস্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন অটোরিকশা চালক বলেন, অনেকের কাছ থেকে টাকা রাখে কিন্তু রশিদ দেয় না। ভিতর থেকে স্যারেগো সাথে থাকে তারা টাকা রাইখা গাড়ি গেটের বাইরে বাইর কইরা দেয়।

ভোলা নামে এটিএসআই আবুল বাশারের সাথে কাজ করে তিনি বলেন, আমরা ৪-৫ জন কাজ করি। সবার বেতন বাশার স্যারই দেয়। আমরা সবাই তার সাথে গাড়ি ধরি আর একজন বিল করে। এরপর গাড়ি ছাড়ি। এছাড়া মনির, মানিক ও সোহেল, মালেক আর কনস্টবল আজাদ।

এটিএসআই আবুল বাশারের সাথে দৈনিক চুক্তিতে কাজ করা লোকদেরকে টাকা নিয়ে সরকারি রসিদ না দিয়ে গাড়ি কিভাবে ছেড়ে দেয়া হয় এবিষয়ে জানতে চাইলে তারা এবিষয়টি অস্বীকার করেন। এছাড়া তাদের বেতন কিভাবে দেয়া হয় জিজ্ঞাসা করলে তারা কিছু না বলে সরে যায়।

যারা গাড়ি ধরে তাদের বেতন কিভাবে ও কোথায় থেকে দেয়া হয় এটিএসআই আবুল বাশারকে এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তার বেতন থেকে তার লোকজনকে বেতন দেন। এরপর তিনি সাংবাদিককে বলেন আপনি বুঝবেন না কিভাবে ওদের বেতন দেই এটি গোপন কথা।

এ বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন ও প্রসিকিউশন) ট্রাফিক বিভাগ নারায়ণগঞ্জ মোঃ আব্দুল করিম শেখ মুঠোফোনে বলেন, আপনিতো জানেনই ওদের বেতন কিভাবে দেয়। এছাড়া তিনি আরো বলেন, যারা বেতন পায় তাদের জিজ্ঞেস করেন তারা কিভাবে বেতন পায়।

(এস/এসপি/মে ০৪, ২০২৩)