নওগাঁ প্রতিনিধি : ৩৬ শতকের একটি আম বাগানের নিযন্ত্রণ নিয়ে জমির প্রকৃত মালিক আর বর্গাদার এখন মুখোমুখি। দীর্ঘদিন জমির কোন আয় না আসায় পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ওই জমি উদ্ধার করতে গিয়ে বিতাড়িত হতে হয়েছে জমির প্রকৃত মালিকদের। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জমির বর্গাদার আবুল কাশেম প্রামানিক(৮০) ও তার তিন ছেলেসহ ১০/১২ জন সন্ত্রাসী কায়দায় বাগান থেকে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। আবার জমি ফেরত পেতে দাবি করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ। শুধু তাই নয় এনিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে সকলকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এই আলোচিত ঘটনাটি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আমরুল কসবার দারিয়াগাথি গ্রামে ঘঠেছে। এই ঘটনায় জমির প্রকৃত মালিক আবুল হাসান চৌধুরী বাদী হয়ে নওগাঁর আমলী আদালত-৮ এ বর্গাদার ও তার তিন পুত্রসহ ১০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলাটি বৃহস্পতিবার আত্রাই থানায় রের্কড করা হয়েছে বলে থানার ওসি জানিয়েছেন। 

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, আমরুল কসবার দারিয়াগাথি মৌজার ১৭৮৭ খতিয়ানের ৪৯৫২ ও ৪৯৫৩ দাগে মোট ৩৬ শতক পতিত জমি বাদী আবুল হাসান চৌধুরীর মা বেগম হাজেরা খাতুন চৌধুরী পৈত্রিক সূত্রে মালিক। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় ওই পতিত জমিতে আমসহ বিভিন্ন ফলাদি ও বনজ গাছ রোপন করেন এবং তৎকালীন সময় থেকে আবুল কাশেম প্রামানিককে বর্গাদার হিসাবে নিয়োগ করে তিনি স্বামী-সন্তানসহ নওগাঁ শহরে বসবাস করে আসছিলেন। একইভাবে বর্গাদারও প্রতি বছর জমির মালিককে নওগাঁ এসে জমির ভাড়া বাবদ অর্থ পরিশোধ করে আসছিলেন।

গত ২০০৭ সালে বেগম হাজেরা খাতুন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর ওই জমির প্রকৃত মালিক হন তার দুই ছেলে আবুল হাসান চৌধুরী ও হাফিজুর রহমান চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে বর্গাদার কোন যোগাযোগ এমনকি জমির ভাড়া কোন কিছুই পরিশোধ না করায় ওই জমি উদ্ধার করতে গত ২৩ এপ্রিল সকাল ১০টায় আবুল হোসেন চৌধুরী ও হাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তাদের কয়েকজনকে সাথে গ্রামে যায় এবং বাগানে পৌছা মাত্র বর্গাদার আবুল কাশেম প্রামানিকের নিদের্শে তার তিন ছেলে হাফিজুর রহমান (৪৪), মোজাফ্ফর হোসেন (৪২) ও তরিকুল ইসলাম(৪০)সহ আরো ৭/৮ জন সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রের মুখে নানা হুমকি ধামকি দিয়ে বাগান থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়। বাদী আবুল হাসান চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন তারা আগে থেকেই দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে তৈরী ছিল। আমরা বাগানে পৌছা মাত্রই তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়ে অশালীণ গালিগালাজ,লম্ব-ঝম্ব করে আমাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করে। সেই সঙ্গে জমি ফেরত পেতে হলে আমাদের নিকট ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। যদি না করি এবং জমি নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করি তাহলে আমাদের পরিবারের সকলকে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়।

আমরা নিরুপায় হয়ে থানা পুলিশের আশ্রয় চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। বাধ্য হয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে সেখান থেকে আমরা চলে আসি। এই ঘটনার পর থেকে আমরা পরিবারের সদস্য নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি। মামলার বাদীর ছোট ভাই এই ঘটনার প্রধান স্বাক্ষী নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সংবাদের সাবেক জেলা প্রতিনিধি মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন বর্গাদার ও তার পুত্ররা আগে থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে লিপ্ত। গত ২০০৪ সালের দিকে নওগাঁয় বাংলা ভায়ের উত্থান ঘটলে তারা সেই বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হিসাবে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ওই দিন আমরা বাগানে গেলে তারা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাগানে মহড়া দিতে থাকে।

একপর্যায় তাদের মধ্যে একজন আমার বড় ভাই আবুল হাসান চৌধুরী মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আমাদের সেখান থেকে চলে যেতে হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে আমরা জীবন নিয়ে নওগাঁয় ফিরে আসি। এনিয়ে তাদের সাথে শান্তিপূর্ন মিমাংসা চালানোর চেষ্টা করলে ওল্টো তারা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বাধ্য হয়ে আমরা গত ২৭ এপ্রিল আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আশা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।

এ ব্যাপারে বর্গাদার আবুল কাশেম প্রমানিক এর সাথে(০১৩০২৬৭৩১৪০) মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এর বেশী কিছু এখন আর বলতে পারব না বলে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।

এদিকে নওগাঁর আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ তারেকুর রহমান সরকার বলেন আদালত থেকে প্রাপ্ত মামলাটি বৃহস্পতিবার দুপুরে রের্কড করা হয়েছে এবং তাৎক্ষনিক আসামীদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(বিএস/এসপি/মে ০৫, ২০২৩)