শরীয়তপুর প্রতিনিধি: জেলার জাজিরা উপজেলার চরাঞ্চলে এ বছর প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমিতে আলোক সংবেদনশীল নয় এমন উচ্চ ফলনশীল জাতের আউস ধানের চাষ হয়েছিল। মাজরা পোকার আক্রমণে ফলন হয়েছে অর্ধেকেরও কম।

গত ৫ বছর থেকে জাজিরায় চরাঞ্চলে আবাদ হয়ে আসছে উচ্চ ফলনশীল মধুমতি-৫, কৃষান ও এসিআই-১ জাতের আউস ধান। বছরের একটা বড় সময় ফসলী জমি যাতে অনাবাদি না থাকে সেজন্য আলোক সংবেদনশীল নয় এমন জাতের এই ধান আমন ও আউসের মাঝামাঝি সময় হয়ে থাকে। চরাঞ্চলে এ ধানের উৎপাদন ভাল হয়। রোপা এবং বোনা দুই পদ্ধতিতেই এ ধানের আবাদ করা যায়।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে এ বছর জাজিরার চরাঞ্চলের বড়কান্দি, পালেরচর, কুন্ডেরচর ও বিলাশপুরে ২ হাজার ৭ শত ৫০ বিঘা জমিতে এই বিশেষ জাতের ধান চাষ করা হয়। এই ধানের বিঘাপ্রতি ফলন হয় ২৫-৩০ মণ। কিন্তু এ বছর ১২ থেকে ১৫ মণের বেশি ধান উৎপাদন হয়নি।

শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে এ ধানের আবাদ শুরু আর কর্তন শুরু হয় আশ্বিনের শেষ সপ্তাহ থেকে। সার, বীজ, কীটনাশক ও নিড়ানি খরচ দিয়ে প্রতিবিঘা জমি চাষে এবার কৃষকের খরচ হয়েছে ৭ হাজার ৫শ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় এবার ফলন একেবারেই খারাপ। মাজরা পোকা, অকাল বন্যা আর নদী ভাঙনের ফলে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাভের আশা তো দূরের কথা কৃষক এবার খরচ পুষিয়ে নিতে পারেনি।

জাজিরার পালেরচর ইউনিয়নের ধানচাষি ফজলুল হক সরদার বলেন, মাজরা পোকার আক্রমণে ধান নষ্ট হয়েছে। আগের বছর থেকে এবার অর্ধেকেরও কম ফলন হয়েছে। ক্ষেতে বারবার ওষুধ দিয়ে পোকা দমন করতে পারিনি। কৃষি বিভাগ সময়মতো আমাদের পাশে দাঁড়ালে এতটা বিপাকে পড়তে হতো না।

বড়কান্দি ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মান্নান হাওলাদার জানান, একদিকে মাজরা পোকার আক্রমণ অপরদিকে অকাল বন্যার পানিতে আমাদের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমি প্রায় ৮ বিঘা জমিতে এই ধানের আবাদ করেছিলাম। আমার কমপক্ষে ২০০ মণ ধান পাবার কথা ছিল, সেখানে পেয়েছি মাত্র ৫০-৬০ মণ। এতবড় লোকসান যে কীভাবে পোষাব জানি না।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের মধুমতি-৫, কৃষান ও এসিআই-১ আউষ ধান আলোক সংবেদনশীল নয় এমন জাতের। কৃষকের জমি যাতে অনাবাদি না থাকে সেজন্য কৃষি গবেষণায় এ জাত আবিষ্কার করা হয়েছে। এ ধানের ফলন খুব ভাল হয়, কিন্তু এ বছর মাজরা পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফলন কিছুটা কম হয়েছে।

(কেএনআই/এনডি/অক্টোবর ২৬, ২০১৪)