নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো বেশিরভাগ নারী তার জীবনের সিংহভাগ কাটিয়ে দেন গৃহস্থালীর কাজে। এই কাজের কোন মূল্যায়ন কখনোই করা হয় না। এবং এই কাজে সংশ্লিষ্টতার জন্য তাকে গৃহিনী ব্যতিত কোনো স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না। তবে এবার এসব কাজের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করেছে সিপিডি।

শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘অর্থনীতিতে নারীদের অবদান নিরূপণ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক প্রতিবেদন তুলে ধরে। সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে রাজধানীর এক হোটেলে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অর্থনীতিবিদ, নারীনেত্রী, এনজিও ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা আখতার, রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট শাহিদা পারভীন এ গবেষণা করেন।

সিপিডির এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী ঘরে করেন এমন কাজের আর্থিক মূল্য গত অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশের সমান। চলতি মূল্যে টাকার অঙ্কে তা ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। স্থায়ী মূল্যে এটা পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। একজন নারী প্রতিদিন গড়ে একজন পুরুষের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সময় কাজ করেন, যা জাতীয় আয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। একজন নারী এমন কাজ করেন প্রতিদিন গড়ে ৭ দশমিক ৭ ঘণ্টা। আর পুরুষ করেন মাত্র আড়াই ঘণ্টা। একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজ করেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ কাজের গড় সংখ্যা ২ দশমিক ৭। জাতীয় আয়ে নারীর যে পরিমাণ কাজের স্বীকৃতি আছে, তার চেয়ে ২ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৯ গুণ কাজের স্বীকৃতি নেই।

সিপিডি তাদের গবেষণায় জানায়, মজুরিহীন কাজে সম্পৃক্ত নারীদের তিন-চতুর্থাংশই মজুরি পাওয়া যাবে এমন কাজ করতে চান না। শহরে এমন নারীর হার ৮০ দশমিক ১৭ শতাংশ, গ্রামে ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ। মজুরি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নন এমন নারীদের ৬০ শতাংশই বলেছেন, তাঁদের পরিবার চায় না তাঁরা বাইরে কাজ করুক। ওই নারীদের কাজ করতে না চাওয়ার অন্য কারণগুলো হলো পরিবারকে অধিক সময় দিতে চান, পরিবারের সদস্যদের যত্ন নেওয়ার কেউ নেই, উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না, অসুস্থতা, অর্থের প্রয়োজন নেই এবং পারিবারিক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা।

গবেষণায় দেখা গেছে, মজুরির টাকা খরচ করতে ৪০ শতাংশ নারীকে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। আর ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী নিজের ইচ্ছামতো খরচ করতে পারেন। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৮৯ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত রয়েছেন, যাঁরা কোনো মজুরি পান না।

নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য জাতীয় হিসাবব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা, গৃহস্থালির কাজের ভার কমানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ, নারীর মজুরি বৃদ্ধি।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ২৬, ২০১৪)