স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ : বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ নিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমানকে চড়-থাপ্পড় ও মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ঘটনার পর পরই স্কুলের শিক্ষার্থীরা এর সুষ্ঠ বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা এ্যডহোক কমিটির সভাপতি শাহিদুল ইসলাম।

জানা যায়, শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি কমিটির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। পরবর্তীতে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ছয় মাস মেয়াদী এ্যাডহোকে (আহ্বায়ক) কমিটি দিয়েই চলছে পরিচালনা কমিটির কাজ। চলতি এ্যাডহোক (আহবায়ক) কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। বর্তমান এ্যাডহোক কমিটির চার সদস্য হচ্ছেন সভাপতি, অভিভাবক প্রতিনিধি, শিক্ষক সদস্য ও সদস্য সচিব (প্রধান শিক্ষক)।

এরই প্রেক্ষিতে চলতি মাসের ১১ তারিখ রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আহবায়ক কমিটি ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে মিটিং শেষে ৩২৪ সদস্য বিশিষ্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়। পরে সেটি গত ১৫ তারিখ নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়।

আবাইপুর রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমান জানান, দুপুরে হঠাৎ এ্যাডহোক কমিটির সভাপতি শাহিদুল ইসলাম স্কুলে এসে আমার কক্ষে ঢুকে মোবাইলে ভিডিও করতে থাকে। পরে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জিজ্ঞাসা করছে তোমরা জানো কি না ভোটার তালিকা হয়েছে এ বিষয়ে। পরে সে নোটিশ বোর্ডের ভিডিও করার সময় আমি গিয়ে বলি আপনার কিছু জানার থাকলে আমাকে বলেন। আমি আপনাকে ভোটার তালিকার তথ্য দিচ্ছি। সেসময় শাহিদুল ইসলাম রেগে গিয়ে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। পরে জুতা খুলে মারতে গেলে সহকর্মীরা এসে আমাকে রক্ষা করে।

তিনি আরো জানান, আমি সকলের অনুমতি ও মিটিং করেই খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছি। এখানে কোন কারচুপি নেই। আজকে তিনি আমাকে যে মারধর করলো, লাঞ্ছিত করলো এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প, থানার ওসি, উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসারকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। আমাকে মারার পরে শিক্ষার্থীরা কিছুটা উত্তেজিত হয়েছিল এ ঘটনার বিচারের দাবিতে। তবে কেন আমাকে মারা হল তার বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষাবোর্ডে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেছি।

এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয় পরিচালনা এ্যাডহোক কমিটির সভাপতি শাহিদুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষককে আমি কোন আঘাত করিনি। এটা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র সামিউল ইসলাম জিহাদ জানান, আমাদের প্রধান শিক্ষককে থাপ্পড় মেরেছে ও জুতা পেটা করা হয়েছে । এ ঘটনার বিচার দাবি করে আমরা বিক্ষোভ করেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।

বিদ্যালয়ের এই ঘটনার আগে প্রত্যক্ষদর্শী আয়া লায়লা খাতুন জানান, সভাপতি ছবি তুলার সময় হেড স্যার তাকে ছবি তুলার বিষয়ে কেনো তুলছেন বললে এবং ভিতরে গিয়ে বসতে বললে সভাপতি রেগে গিয়ে হেড স্যারকে চর-থাপ্পড় দেই তারপর জুতো খুলে মারতে গেলে আমি সামনে গিয়ে ঠেকায়।
এছাড়াও স্কুলেে আরো কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারি প্রধান শিক্ষককে সভাপতি কতৃক লাঞ্চিতের ঘটনার প্রতক্ষদর্শী হিসাবে স্বীকার করেছেন।

স্থানীয় হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মোল্লা তৌহিদুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর শুনে ঘটনাস্থলে যায়। পরে তাদের শান্ত করে স্কুলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার যে অভিযোগ করেছেন সেটার তদন্ত করে উর্ধ্বতন সারদের সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী জানান, আবাইপুর রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। তবে প্রধান শিক্ষক ফোন করে জানিয়েছে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেছে এ্যাডহোক কমিটির সভাপতি শাহিদুল ইসলাম। তবে শাহিদুল ইসলামও ফোন করে জানিয়েছে কোন লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেনি। শুধু তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়েছে। তবে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষেই বলা যাবে সঠিক কি ঘটেছিল।

(একে/এসপি/মে ১৮, ২০২৩)