মানিক লাল ঘোষ


"দেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে  নিতে একটি  কার্যক্রম চলছে। এটি সফল করতে নতুন প্রজন্মকে পূর্বসূরিদের থেকে আরও আধুনিক ও পরিবর্তনশীল করে গড়ে তুলতে হবে।'' সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন  সিআরআই-এর ত্রৈ-মাসিক পলিসি বিষয়ক ম্যাগাজিন হোয়াইট বোর্ডের সপ্তম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে সিআরআই"র ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব  সিদ্দিকের এমন মন্তব্য তরুণ প্রজন্ম ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে তার চিন্তা চেতনা ও ভাবনার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনকে মোকাবিলা করতে পরবর্তী প্রজন্মকে গড়ে তোলার বিষয়কে এখানে তিনি অগ্রাধিকার  দিয়েছেন। 

আগামী দুই দশকে দেশকে দু’টি মাইলফলকে এগয়ে যেতে হবে জানিয়ে ত্রৈমাসিক হোয়াইট বোর্ডের প্রধান সম্পাদক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বলেন, ""২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল ও ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত-সমৃদ্ধ অর্থনীতিতে উন্নীত হতে হবে।''

দেশের অর্থনীতি, অগ্রগতি, তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে তার ভাবনার মূল কারন তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের গর্বিত তৃতীয় প্রজন্ম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। ডাক নাম ববি। ১৯৮০ সালের ২১ মে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। ছোট বেন টিউলিপ সিদ্দিক বহিঃবিশ্বে বাঙালিদের অহংকার। ব্রিটিশ লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রী সভার শিক্ষা বিষয়ক কেবিনেটের উপমন্ত্রী।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে পরিবারটির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এ দেশের প্রতিটি গনতান্ত্রিক আন্দোলনে জুড়ে আছে এই পরিবারটির নাম। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা সর্বোপরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সব সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে আড়াল করে রাখার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি'র মধ্যে যে নির্মোহ জীবনাচারের পরিচয় পাওয়া যায়, তা অতুলনীয়। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এমন৷ ব্যক্তি ও মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা যায়।

ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকে ও নিজেকে নির্লোভ ও নির্মোহ রাখার এই কঠিন লড়াইয়ে উত্তীর্ন বঙ্গবন্ধু পরিবার। যেমনটি আমরা জেনেছি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ও বঙ্গবন্ধুর শহীদ পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামালের বেলায়। কতটা স্বাভাবিক সাধারণ জীবনের অধিকারী ছিলেন তারা। বঙ্গবন্ধুর জামাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী হওয়া স্বত্বে কতটা নির্লোভ ও নিরহংকারী ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সেই সেই শিক্ষাকে ধারন করে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার বেড়াজালে নিজেদের জড়াননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার আইটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। নির্লোভ ও নিরহংকারী থাকার কঠিন সাধনায় উত্তীর্ণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানাও জড়াননি ক্ষমতার রাজনীতিতে।

তার সুযোগ্য পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতে নিজেকে দূরে রেখেছেন রাজনৈতিক অংগনের পদ পদবি থেকে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের জেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতিতে এসেছিলেন আওয়ামী লীগেকে পুনঃগঠন,বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন,অসহায় গরীব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। তাই নিজেকে সবসময় জনগণের সেবক হিসেবেই পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।

পরিবার থেকে আচার আচরন,ভদ্রতা, দেশপ্রেম, ও সততা ও মানবিকতার শিক্ষায় গড়ে ওঠা রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বিশ্বখ্যাত লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে স্নাতক পাস করেন। পরে একই প্রতিষ্ঠান থেকে কমপ্যারেটিভ পলিটিক্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। স্নাতক পর্যায়ে তার অধ্যয়নের প্রধানতম বিষয়গুলো ছিল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড হিস্ট্রি, পলিটিক্যাল থিওরিজ, ইন্টারন্যাশনাল হিস্ট্রি। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তার অন্যতম পাঠ ছিল কমপ্যারেটিভ পলিটিক্স, কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি।

রাজনীতিতে কোন পদ পদবী গ্রহণ না করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নানা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে সোচ্চার রাজনৈতিক সচেতন বঙ্গবন্ধুর এই মেধাবী দৌহিত্র। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এ দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করেন নিজেকে। এর আগে অবশ্য ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে দুই বছর মেয়াদে দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাইবার প্রচারে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ । জাতীয় নির্বাচনে অনলাইন প্রচারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর অনলাইনভিত্তিক প্রচার বা সাইবার প্রচারের মূল দায়িত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের এই আলোকিত তরুন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কাজ নিয়ে ‘আপনি জানেন কি’ শিরোনামে ১৭টি প্রামাণ্যচিত্র এবং অন্যান্য সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের তুলনামূলক ১৯টি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি এবং নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে আসার অনুষ্ঠান ‘ইয়াংবাংলা’র অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি। এই প্রচারনা বিশেষ করে নতুন ও তরুণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া তোলে।

এক এক নির্বাচনে নতুন নতুন চিন্তা চেতনায় তৃণমূলের জনগনের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র ববি হাজির হন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে । ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একইভাবে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি একঝাঁক তরুণকে নিয়ে নামেন অনলাইন প্রচারে। আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি ববির সুযোগ্য পরিচালনায় ‘ইয়াংবাংলা’, ‘জয় বাংলা কনসার্ট’ এরই মধ্যে দেশের তরুণদের মন জয় করেছে। ‘মুজিব’ সিরিজের গ্রাফিক নভেল দেশের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ওপর ভিত্তি করেই প্রকাশিত হচ্ছে গ্রাফিক নভেল মুজিব। শুধু তরুণ প্রজন্ম নয় বঙ্গবন্ধু নতুন ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে ও।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অবদান থেকে মুছে ফেলার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলে। নতুন প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে পৌঁছে দিতে ববির আপ্রাণ চেষ্টা প্রশংসনীয়।

১/১১ সেই দুঃসময়ে ২০০৮ সালের জুন মাসে বাঙালির আস্থা ও আশা আকাঙ্খার বাতিঘর জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রেও সাহসী ভূমিকা পালন করেন ববি।। ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা যখন গ্রেপ্তার হন তখন লন্ডনে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ‘ফ্রস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-খ্যাত স্যার ডেভিডকে যে সাক্ষাৎকার দেন, যা বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরিতেও বড় ভূমিকা রাখে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত ডকুড্রামা ‘শেখ হাসিনা : এ ডটারস টেল’। যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগের ও পরের জীবন এবং ১৯৭৫ সালের পরের জীবনের অসাধারণ গল্প উঠে এসেছে জননেত্রীর। এই ডকুড্রামা নির্মাণের নেপথ্যে কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তার নির্দেশনায় জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবন এবং কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছে সিআরআই।বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অর্জনকে গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুলে ধরছে সিআরআই। যার মূল পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম জাতির পিতার দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। মেধা, মনন ও প্রজ্ঞায় আলোকিত হোক তার ভবিষ্যৎ পথচলা। তারুণ্যের অহংকার রাদওয়ান সিদ্দিক মুজিব ববি'র জন্য নিরন্তর শুভকামনা।

লেখক : সহ সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য।