শেখ এনামূল হক বিদ্যুৎ, সোনারগাঁ : দীর্ঘ ২৫ বছর পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে। ৭১ সদস্যের এই কমিটিতে ২২ জন একেবারেই নতুন মুখ। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কোনো পদে তাঁরা কখনো ছিলেন না, কখনো জয় বাংলা বলেছেন কিনা সন্দেহ। প্রস্তাবিত এই কমিটিতে স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রবীণ নেতারা।

কমিটিতে সভাপতি পদে শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার। সিনিয়র সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সহসভাপতি পদে আছেন জহিরুল হক, আরিফ মাসুদ বাবু, ইসহাক মিয়া, আব্দুল মতিন দুলাল, শহীদুল্লাহ সরকার, ওবায়দুল হক মাস্টার, অধ্যক্ষ গোলাম মর্তুজা ও আলী আকবর। যুগ্ম সম্পাদক পদে তিনজন হচ্ছেন আশরাফুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম নান্নু ও মো. আলী হায়দার এ ছাড়া আইন বিষয়ক সম্পাদক ফজলে রাব্বী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বাবুল ওমর বাবু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক খন্দকার আমিনুল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান মোল্লা, দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ দেওয়ান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোস্তফা কামাল নিলু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বাবুল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছগির আহাম্মেদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক কোহিনুর ইসলাম রুমা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ওসমান গনি, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক নেকবর হোসেন নাহিদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুর খান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম মুকুল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম,জাকির হোসেন ও নাসরিন সুলতানা ঝরা, সহদপ্তর সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবু, সহপ্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান আক্তার ও কোষাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন ভুঁইয়া।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই কমিটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাউকে রাখা হয়নি। শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ত্যাগী ও প্রবীণ কোনো নেতাকে না রেখে যে যুবককে সদস্য রাখা হয়েছে (রাসেল উদ্দিন রাসেল) তিনি আগে দলের কোনো অঙ্গসংগঠনেও ছিলেন না। কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলেও সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মারুফ ইসলাম ঝলক এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী সানজিত হাসনাতকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা না হলেও সাধারণ সম্পাদকের আত্মীয় পরিচয়ে ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা আব্দুল মতিন দুলালকে সহসভাপতি করা হয়েছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার পরও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবুকে সহসভাপতি করা হয়েছে।

এ ছাড়া ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে জাতীয়পার্টির ছায়া নেতা গত ইউপি নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউসুফ দেওয়ানকে। বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করা এক সময়ে বিএনপি নেতা মাহাবুব হোসেন সরকার ও জাতীয় পার্টি নেতা নোয়াগাঁও ইউনিয়ন এর বিদ্রোহী প্রার্থী শামসুল আলম শামসুকেও সদস্য করা হয়েছে। সদস্য করা হয়েছে মার্ডার মামলার আসামি মো.আব্দুল হালিম ও মো.মোশাররফ মেম্বারকে।

শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রবীণ নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রস্তাবিত এই কমিটিতে স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বাণিজ্য হয়েছে। জীবনে কোনো দিন দল না করে, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে শুধু অর্থের বিনিময়ে শিল্পপতি ফারুক হোসেন ভুইয়া কোষাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। জাকির হোসেনের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার পরও অর্থের বিনিময়ে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। হেফাজতের সাথে জড়িত ও জামাত বিএনপি ঘরানার ব্যক্তিদেরও স্থান দেওয়া হয়েছে কমিটিতে। উপেক্ষা করা হয়েছ শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ জনগোষ্ঠীকে। আমরা দলের হাইকমান্ডকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাব।

জানতে চাইলে সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে জমা দেওয়া হয়েছে। শিল্পপতি ফারুক ভুইয়া ও আমার ছেলের নাম হাইকমান্ডের নির্দেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফরিদপুরের বাসিন্দাকে সহসভাপতি করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছা অনুযায়ী। কারণ এই ব্যক্তি সাধারণ সম্পাদকের আত্মীয়। অর্থের বিনিময়ে কাউকে কমিটিতে রাখার অভিযোগ নাকচ করে দেন তিনি।

৭১ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। তিনি বলেন, চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে অবশ্যই কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। বিতর্কিত কেউ কমিটিতে থাকতে পারবে না।

উল্লেখ্য যে, গত ৫ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদূর রহমান মাসুমের যৌথ স্বাক্ষরিত প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত মো. শহীদ বাদলের হাতে পৌঁছে দেন।

এর আগে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছিল। তারপর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সম্মেলনে শুধু সভাপতি, সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিলো।

(এসবি/এসপি/মে ২৫, ২০২৩)