জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : কর্ণফুলী উপজেলা চরপাথরঘাটার পুরাতন ব্রিজঘাটে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ) এর নিজস্ব খতিয়ানভূক্ত অধিগ্রহণকৃত অনেক জমি রয়েছে। ওই জমিতেই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা দীর্ঘদিন যাবত কাঁচা বাজার বসিয়ে ব্যবসা করতেন। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছরেও সড়ক প্রশস্ত কিংবা স্থায়ী বাজারের জন্য কোন প্রকল্পও গ্রহণ করেনি সিডিএ। বরং পূনরায় উচ্ছেদ করা হয়েছে দখলদারদের। ফলে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে এখন রাস্তার ওপর ঠেলায় বা ভ্যানে কাঁচাবাজার বিক্রি করছেন। এখন ব্যবসায়ীরাই দ্রুত স্থায়ী বাজার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছেন।

দীর্ঘ ৪০ বছরেও স্থায়ীভাবে চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাটে কোন কাঁচাবাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন বিংবা ইউনিয়ন পরিষদের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে, ব্যবসায়ীরা সিডিএ সড়ক দখল করে ব্যবসা করতেন দিনের পর দিন।

উচ্ছেদের পর ব্যবসায়ীরা সিডিএ’র ওই নির্ধারিত স্থানে স্থায়ী বাজার নির্মাণ করার জন্য দাবি তুলেছেন। কেননা ওখানে স্থায়ী কোনো কাঁচাবাজার নেই। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশের জায়গা দখল করে বসত মাছ ও তরিতরকারির দোকান। এতে অপ্রশস্ত সড়কগুলো আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে সৃষ্ট যানজটে বেড়েছে পথচলতি মানুষের ভোগান্তি। এ ছাড়া চরপাথরঘাটায় নেই খেলার মাঠ।

কিন্তু একটি মহল সেখানে বাজার নির্মাণ করতেও গোপনে বিরোধিতা করবেন বলে বাজারের লোকজন জানান। কেননা তারা আসলে রাস্তার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৈনিক চাঁদা তোলেন। স্থায়ী বাজার হলে তাদের চাঁদা তোলা বন্ধ হবে বলে বিরোধিতা করবেন। এমন আশঙ্কা অনেকের।

স্থানীয়রা জানান, বাজার না থাকায় চরপাথরঘাটা ও চরলক্ষ্যার ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ি আজগর আল পাপ্পু বলেন,‘ব্রিজঘাট বাজার ইজারা দিলেন উপজেলা! উচ্ছেদ করলেন সিডিএ, ক্ষতি হল ব্যবসায়ীর, বদনাম হল সরকারের। উধাও হয়ে গেল পজিশন বিক্রি করা জমিদাররা। এখন একমাত্র ভরসা ফাদার অব কর্ণফুলী মাননীয় ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়।’ উচ্ছেদে দোকান হারানো মো. ইমরান পাটোয়ারী আবার বলেন, ‘উপজেলা নাড়া দিলেন কিন্তু সিডিএ সাড়া দিলো কঠিন রুপে। যার কারণে আমরা দোকান হারালাম।’

চরপাথরঘাটার এলাকার সামাজিক সংগঠক ও রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ সেলিম হক জানান,‘ঢাকা থেকে এসে দেখি বদলে গেছে চিরচেনা পরিবেশ। চেনা জায়গাটি অচেনা লাগছে। নিজের থেকেও খারাপ লাগছে। সব দোকানদার গুলো পরিচিত ছিল। চেহারার দিকে থাকাতে পারছি না। দীর্ঘদিনের দোকানপাট। প্রায় সকলে আত্মার আত্মীয়ের মতো। সবার মূখে কান্নার ভাব-মলিন চেহারা। এ মুহুর্তে সান্ত্বনাও বিষ মনে হবে। প্রস্তুতি বিহীন উচ্ছেদ। তবুও আমি চেষ্টা করব দোকান মালিক ও জমিদারদের পাশে থেকে সিডিএ’র সাথে কথা বলে ভালো কিছু করার।’

সিডিএর এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান বলেন, ‘ব্রিজঘাট কাঁচাবাজার থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট পর্যন্ত দুপাশ যতটুকু দোকানঘর ভেঙেছে তাতে সিডি অস্থায়ী বাউন্ডার নির্মাণ করে দিচ্ছেন। এত টুকুতেই দুদিনের অভিযান সমাপ্তি হবে। পরে আবারো উচ্ছেদ অভিযান করা হবে। তবে সিডিএর পরিকল্পনা রয়েছে ব্যবসায়িদের জন্য স্থায়ী দোকানঘর নির্মাণের।’

সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, ‘ধারাবাহিক ভাবে সিডিএ’র সব বেদখল জমি উদ্ধার করা হবে শিগগরই বাকি স্থাপনা গুলোও ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ সিডিএ সচিব মো. মিনহাজের রহমান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ি সব উচ্ছেদ করা হচ্ছে। মামলার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, ‘কর্ণফুলীতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। গত দুই দিনের অভিযান শেষ হয়েছে। ওখান থেকে অনেকেই ফোনে জানিয়েছেন এতে স্থানীয় গরিব মানুষজন যারা দোকানপাট করতেন তাঁদের বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে শুনেছি। এসব বিষয় বিবেচনা করে দোকানদারদের জন্য স্থায়ী কিছু করার চিন্তা করব।’

(জেজে/এসপি/মে ২৫, ২০২৩)