স্টাফ রিপোর্টার : অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেকসই অঙ্গীকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ সরকার। মার্কিন নতুন ভিসানীতির প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার (২৫ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়।

মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ এ ঘোষণা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখতে সব স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখতে চায়।

বুধবার (২৪ মে) যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যের সমর্থনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেন নতুন এ ভিসানীতি ঘোষণা করেন।

এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘এ নীতির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা এর সঙ্গে জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়- এমন যেকোনো বাংলাদেশির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করতে পারবে।’

ব্লিঙ্কেনের ভিসানীতি ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিঘ্নসৃষ্টিকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ড বা হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এতে বলা হয়, ‘সরকার আশা করে যে, স্থানীয় অগণতান্ত্রিক শক্তি যারা সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা চালায় তারা সতর্ক থাকবে এবং সংবিধান নির্দেশিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে তাদের ভ্রান্তপ্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন ও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘দেশে কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের অর্জন ধরে রাখা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভরশীল।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ হিসেবে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে খুবই সচেতন। ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকার নজির নেই।’

এতে আরও বলা হয়, জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার একটি রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে। এ অধিকার রক্ষায় এই দলের নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রয়েছে।

২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

এতে বলা হয়, এর ফলে দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে চরম দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। গত ১৪ বছরে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হওয়ার কারণেই এসব অর্জিত হয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সরকার সব শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা গুরুত্ব দেয়। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে পরামর্শমূলক পদ্ধতিতে বাংলাদেশে নির্বাচনী সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকার ১০ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত করেছিল। বর্তমান সরকার ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড ইস্যু করেছে।

‘ভোটারদের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও এজেন্টদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন পূর্ণ স্বাধীনতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এ আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।’

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ দ্বারা বাধ্যতামূলকভাবে সমগ্র নির্বাহী ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, যাতে এটি নির্দেশমতো দায়িত্ব পালনে কমিশনকে সহায়তা করতে পারে।

(ওএস/এএস/মে ২৬, ২০২৩)