আবীর আহাদ


গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। একজন অপরিচিত অরাজনৈতিক বৃদ্ধাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার মানে রাজনীতি ও রাজনীতিকদের প্রতি গণমানুষের অনীহা কিনা! তাই যদি হয়, তাহলে সেটা জাতির জন্য মহা এক অশনি সংকেত! আবার এই নির্বাচনে দুর্নীতি লুটপাট ও যা-ইচ্ছে-তাই করার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ কিনা সেটাও বিবেচ্য বিষয়। 

অপরদিকে যথোপযুক্ত ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দেয়ায় নিজদলীয় নেতা-কর্মীদের মনে কোনো হতাশা কাজ করছে কিনা, যার জলে এতবড় আলোচিত নির্বাচনে তারা নির্লিপ্ত ছিল কিনা, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। কারণ নির্বাচনে নাকি ৫০% ভাগ ভোটারই অনুপস্থিত ছিল। আবার কেউ কেউ একশ্রেণীর আওয়ামী নেতাদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেন যে, তারা অর্থ ও আত্মীয়তার মোহে ভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, এমনকি রাজাকারদেরও দলের বিভিন্ন কমিটিতে এনে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করতে গিয়ে পোড়খাওয়া আওয়ামী লীগার ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নিষ্ঠুরভাবে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, যার ফলে সেসব নেতা-কর্মী অভিমানে নির্বাচনে ভোট দিতেও যায়নি, যার ফলে এত বিপুলসংখ্যক লোক নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছে!

এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার নৌকোমার্কার পক্ষে সর্বপ্রকার প্রচারণা ও প্রচেষ্টা করেও বিজয়ী হতে না-পারার মধ্যে এসব বিষয়গুলো কাজ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। আর যাদের অর্থ ও আত্মীয়তার মোহে দলে আনা হয়েছে, সেসব সুযোগসন্ধানী হাইব্রিডরা দলের পক্ষে কোনো ভূমিকা পালন করেনি, তারা বরং দলের দুর্বলতা অনুধাবন করে নিজেদের ভবিষ্যত অস্তিত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে গোপনে বিপক্ষকেই সহযোগিতা করেছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে!

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনের সামান্য সময়-পূর্বে অনুষ্ঠিত গাজীপুর নির্বাচন থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে আত্মশুদ্ধি আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধি করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ লুটেরা রাজাকারদের নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত ও লালিত দল ও শুভানুধ্যায়ীমহল থেকে সৎ ও ত্যাগীদের থেকে দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। দলীয় হাইকমান্ডকে একটা কথা মনে রাখতে হবে, অর্থশালী দুর্নীতিবাজ লুটেরা রাজাকার ও হাইব্রিডদের দলীয় কর্মীবাহিনী ও জনগণ পছন্দ করে না।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।