রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : একটি ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা চুরির দায় থেকে অব্যহতি পেলেন সাতক্ষীরা সদরের আগরদাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুস সবুর। গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে আবাদেরহাট বাজারে যেয়ে সদর থানার তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা দেন।

আগরদাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিয়ালডাঙা গ্রামের মোঃ আব্দুস সবুর জানান, গত ২৫ এপ্রিল সাতক্ষীরা শহরের সোসাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮৩ হাজার টাকা তুলে অগ্রনী ব্যাংকে এক পরিচিত ব্যক্তির খোঁজে যান। সেখান থেকে বের হয়ে ফুটপাতে থাকা এক হকারের কাছ থেকে লেবু মিশ্রিত সরবত পান করেন। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি অসুস্থতা বোধ করতে থাকেন।

একপর্যায়ে তিনি নিজ মটরসাইকেলে দুপুর ১২টার দিকে বাড়ি ফেরেন। নিজ বসত ঘরের ড্রয়ারে টাকা রেখে তিনি নিজের জমি ঘুরে আবাদেরহাট বাজারে আসেন। মিস্ত্রীর কাছে মটর সাইকেল মেরামত করতে দিয়ে তিনি বাজারের নিজের পরিচিত মিজানুরের চায়না বাংলা ফানিচারে বসেন। সেখানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় ড্রয়ার থেকে একটি কার্ড বের করে নিজের কাছে রাখেন। বিষয়টি রাস্তার অপরপাশের নিজ দোকানে বসে সিসিটিভিতে দেখেন মিজানুর রহমান। তাৎক্ষণিক তিনি ছুটে এসে মিজানুর রহমানের কাছে চলে আসেন। জানতে চাইলে আব্দুস সবুর ড্রয়ার থেকে একটি কার্ড নিয়েছেন বলে জানান। এর কিছুক্ষণ পর শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাজারে এস আব্দুস সবুরকে অসুস্থ অবস্থায় দেখে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

আব্দুস সবুরের ভাই শিয়ালডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুর রফিক পিকে বলেন ২৫ এপ্রিল বিকেল তিনটার দিকে ব্যবসায়ি মিজানুর, বুলবুলি ও রহমত বাজারে বসে তাকে তাদের বাজার সংলগ্ন জমিতে আসতে বলেন। অসুস্থ ভাই আব্দুস সবুর ড্রয়ার থেকে এক লাখ টাকা চুরি করেছেন বলে অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান, বুলবুলি ও রহমত। আব্দুস সবুরের অনুপুস্থিতিতে নিজেদের আত্মসম্মান বাঁচাতে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামের সঙ্গে একত্রে বসে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি অভিযোগকারি মিজানুরকে জানান। একপর্যায়ে অসুস্থ ভাই আব্দুস সবুরের কাছে কিছু জানতে না পেরে ঘটনার দিন রাত সাড়ে সাতটার দিকে শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদে বসে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নগদ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে বিষয়টি মীমাংসা করে নেন। এরপরও বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালানোয় ২৯ এপ্রিল ভাই আব্দুস সবুর সুস্থ হয়ে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।

এ নিয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। পহেলা মে বিপদ বুঝে বিষয়টি বিভিন্ন সামজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন মিজানুর, রহমত ও বুলবুল। পরবর্তীতে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে চুরির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হওয়ায় সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ মোঃ ফকরুল ইসলাম খান মোবাইল ফোনে মিজানুরকে টাকা ফেরৎ দিতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি ১৩ মে ৫৯ হাজার টাকা, ২০ মে ৫ হাজার ও ২২ মে ৫ হাজার টাকা মোট ৬৯ হাজার টাকা আব্দুস সবুরকে ফেরৎ দেওয়া হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে আব্দুস সবুরের টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হয়নি মর্মে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় আবাদেরহাট বাজারে এসে স্থানীয় ব্যবসায়ি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বলে যান পুলিশ পরিদর্শক মোঃ তারেক, উপপরিদর্শক তন্ময় বোস ও উপপরিদর্শক হাসান। এরপরও ২৬ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বকেয়া ১১ হাজার টাকা ফেরৎ পাননি শিক্ষক আব্দুস সবুর।

এ ব্যাপারে আবাদেরহাটের ব্যবসায়ি মিজানুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার বাজারে পুলিশ কর্মকর্তারা এলেও তাকে ডাকা হয়নি। ডাকা হয়নি ঘটনার সাক্ষীদের।

(আরকে/এসপি/মে ২৬, ২০২৩)