একে আজাদ, রাজবাড়ী : বিশ্বশান্তিতে বঙ্গবন্ধুর আগ্রহ ছাত্রবস্থা থেকেই। পরে রাজনীতির মাঠে পুরোপুরি নেমে এদিকে আরও বেশি নজর দেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর মূলনীতি ছিল বিশ্বশান্তি। নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত ও স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষ, যেকোনো স্থানেই হোক না কেন, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তিনি। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক, তাকে সুসংহত করা হোক। কিন্তুু বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে এই আশার স্বাভাবিক বাস্তবায়ন দেখেননি। স্বদেশে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের শুধু শোষণ আর নির্যাতনই করেনি, কারণে-অকারণে হত্যা করেছে। ব্রিটিশ শাসনামলের বিরূপকালেও রাস্তা জনতার রক্তে সিক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা বাঙালির ছিল না। বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারিতে সেটি শুরু হয়েছিল। এই ধারা অব্যাহত ছিল। পাশাপাশি বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের উত্থান আর বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্র, সেটিও ছিল খুবই অমানবিক। বঙ্গবন্ধু এই দুটোরই বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেই নেতাই ছিলেন, যিনি পৃথিবীতে যখন মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, মানুষের ন্যায্য স্বাধীনতা খর্ব করা হয়, শোষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় শোষকের স্বার্থের ইমারত। তখন এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন শোষিতের পক্ষে। তিনি দেশ বা বিদেশ যেখানেই মানবাধিকারের লঙ্ঘন দেখেছেন, মানুষের ন্যায্য স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার সংবাদ পেয়েছেন, সেখানেই প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দুস্থ ও অনাহারীদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়েছেন। তাই স্বাধীনতার পর তিনি প্রথমে জোর দিয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ওপর। এই প্রতিবাদ জাতীয় স্তর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। দেশি-বিদেশি শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে তাঁর নেতৃত্বে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে করেছে বাঙালির ‘অবিসংবাদিত নেতা’। আর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে পান শান্তি পদক জুলিও কুরি। তাই ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় জুলিও কুরি পদক।

স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রনেতার এটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক পদক লাভ। পাংশা উপজেলা প্রশাসন এর আয়োজনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “জুলিও কুরি” শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

রবিবার (২৮ মে) ১০টার দিকে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শ্যামল কুমার বিশ্বাস এর সঞ্চালনায় সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “জুলিও কুরি” শান্তিপদক প্রাপ্তির ৫০বছর পূর্তিতে উপস্থিত ছিলেন, সংসদ সদস্য সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪০ এ্যাড. খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল মোরশেদ আরুজ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুরো প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তিন ক্যাটাগড়িতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

(একে/এসপি/মে ২৮, ২০২৩)