স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় : পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকুরি দেবার নাম করে ফারুক হোসেন নামের একব্যক্তি সদর উপজেলায় বসবাসকারী  তিনব্যক্তির কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ফারুক হোসেন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের নিকট আত্মীয় বলে জানা গেছে। সে দেবীগঞ্জ উপজেলার মল্লিকাদহ চৌধুরীপাড়া গ্রামের মৃৃত আব্দুল বারীর ছেলে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই এলাকার একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের সহকারি শিক্ষকও বটে।

ফারুক কর্তুক প্রতারিত ব্যক্তিরা হলেন, চাকলাহাট এলাকার নারায়নপুর-পন্ডিতপাড়ার জসিম উদ্দীনের ছেলে আপেল মাহমুদ, শিংরোড সিপাহী পাড়া এলাকার নুর ইসলামের ছেলে তারেক ও ভূজারিপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে শাকিল ইসলাম।

ভুক্তভোগীরা জানায়, ফারুক হোসেনের মামা আইয়ুব আলী পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট এলাকায় বসবাস করে, তার সাথে এলাকার অনেকেরই সুসম্পর্ক। আইয়ুব আলীর পরিচয়ে পরিচিত ফারুক নিরীহ মানুষদের সরলতাকে পূঁজি করে সে তিন জনের কাছ থেকে চাকুরি দেবার নামে এই ছয় লাখ টাকা নেয়।ফারুক, মমিন নামের একব্যক্তিকে অনুঘটক করে এই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ফারুক কয়েক মাস আগে থেকে মমিনকে ফুঁসলিয়েছে এই বলে যে, ডিসি অফিসে জনবলের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে চাকুরী প্রার্থী দিতে হবে। টাকা কম লাগবে, চাকুরি হওয়ার পর টাকা দিতে হবে। ফারুকের এই প্রলোভনে পড়ে মমিন তার এলাকার শাকিল, তারেক ও আপেল মাহমুদের পরিবারের সাথে কথা বলে, তারা রাজী হলে ফারুক নিজে থেকে তিন জনের কাগজপত্র প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসক কার্যালয় অফিস সহায়ক পদে আবেদন করে দেন।তাদের সাথে চুক্তি হয় ২৪ লাখ টাকা।তাতে তারা রাজী হয়।পরে ফারুক হোসেন বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আবেদনকারী ৩ জনের কাছ কয়েক দফায় ছয়লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তাদের চাকুরি না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা ফারুকের কাছে টাকা চাইতে গেলে আজ দেবো না, কাল দেবো করে টালবাহানা শুরু করলে, তারা বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে আনেন।

এই বিষয়ে অর্থদাতা তারেক বলেন, ‘ফারুক হোসেনের সাথে আমার চাকুরি দেবার শর্তে ৮ লাখ টাকা চুক্তি হয়েছে, দুই লাখ অগ্রীম দিয়েছি,আমার চাকুরি হয়নি,আমি টাকা ফেরৎ চাই ‘

ভুক্তভোগী শাকিলের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বসতভিটা বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি, চাকুরি হয় নাই ।টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এখন কি যে করি কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।’

মমিন হক জানান, ‘ফারুক হোসেন বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলামের ভায়রা ভাই। একদিন ডিসির গাড়িতে করে আমাকে পঞ্চগড় থেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এজন্য ফারুক হোসেনকে টাকা দেয়া হয়েছে।আমার বিশ্বাস ছিলো চাকুরি হবেই, কারণ ফারুক ডিসির ভাইয়রা ভাই।এখন টাকা ফেরৎ দিচ্ছে, আমি ফারুক হোসেন কাজ থেকে টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য পঞ্চগড় জেলা ও দায়রাজজ কোর্টের আইনজীবি আবু সাঈদ এর মাধ্যমে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি।টাকা ফেরৎ না পেলে মামলা করতে বাধ্য হবো।’

অভিযুক্ত ফারুক হোসেন চাকুরির দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ডিসি অফিসে চাকুরি দেওয়ার নাম করে কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। হাওলাদ হিসেবে ছয় লাখ টাকা নিয়েছি।সময়মত তা পরিশোধ করবো।’

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের আওতাধীন প্রতিটি নিয়োগ আয়নার মত স্বচ্ছ। আমরা প্রতিটি নিয়োগের সময় মাইকিং করে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চাকুরির বিষয় অর্থ লেন দেন না করার জন্য সচেতন করেছি। এরপরও যদি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে, তবে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষ বহন এবং ভোগ করবে।’

(এআর/এসপি/মে ৩০, ২০২৩)