মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মিঠা পানির হাওর হাকালুকি। হওরের আয়তন ১৮.১১৫ হেক্টর। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশাল বিস্তৃত এই হাওরে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জসহ দুই জেলার ৬টি উপজেলা নিয়ে হাকালুকির বিশালতা। বিশাল আকৃতির এই হাওরে কৃষক, জেলা ও পর্যটক সহ প্রতিনিয়ত নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু খোলা আকাশের নিচে বিস্তৃত এই মিঠা পানির হাওওে ছায়া নেয়ার মতো কোনো জায়গা কিংবা গাছপালা নেই। সরকারি উদ্যোগেও নির্মাণ করা হয়নি কোনো ঘর। তীব্র রোধে কিংবা ঝড়ে কৃষকদের চরম দূর্ভোগ পুহাতে হয়। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় গ্রীষ্মকালের রোধে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। কিছু সময়ের জন্য ছায়াতে আশ্রয় নেয়ার জন্য কোনো জায়গা ছিলনা এই বৃহত্তম হাওরে।
বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় কৃষকদের। সেটি মাথায় রেখে নিজ উদ্যোগে হাকালুকি হাওরের চালিয়া এলাকায় ২০১৩ সালে একটি করচ গাছ রোপন করেন কুলাউড়া উপজেলার বাদে ভুকশিমইল গ্রামের মোঃ এলাইছ মিয়া নামের এক ব্যক্তি। গাছ রোপনের পর থেকে এটিকে বাঁচানোর জন্য সকাল বিকাল পানি দিয়েছেন তিনি। পুরো হাওর বছরের অর্ধেক সময় ধরে পানিতে থৈ থৈ থাকে। বৃক্ষ প্রেমি হাজী মোঃ এলাইছ মিয়া’র নিবিড় তত্ত্বাবধানে তিনি এই গাছটি বড় করেন। শুধু একটি নয়, পরবর্তীতে হাওরে আরও ৫টি করছ ও ইজল গাছ রোপন করেছেন তিনি।

জানা যায়, শুকনা মৌসুমে প্রচন্ড গরমের সময় কৃষক, জেলা ও পর্যটকরা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেন। গাছটি কৃষকদের কাছে হাওরের ছাতা হিসেবে পরিচিত। এদিকে বর্ষা মৌসুমে হাওরে ঝড় আসলে জেলেরা নৌকা নিয়ে গাছের পাশে আশ্রয় নেন।

ভুকশিমইল গ্রামের কৃষক গিয়াস মিয়া, ইদই মিয়া ও জিতু মিয়া বলেন, জমিতে কাজ করে এসে আমরা এই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেই। গাছের নিচে বসে শান্তিতে ভাত খেতে পারি। গাছটি ছাতার মতো কাজ করছে।

ট্রলি চালক ফরিদ মিয়া বলেন, ঝড় তোফান আসলে কিংবা রোধে কাজ করার পর বিশ্রাম নেয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। হাওরের কৃষকরা কাজ করে এখানে এসে আশ্রয় নেন। এ গাছটা আমাদের অনেক উপকারে আসছে। তবে সরকারি উদ্যোগে এরকম গাছ লাগানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বৃক্ষরোপনকারী হাজী মোঃ এলাইছ মিয়া বলেন, বাড়ি থেকে টলি দিয়ে গাছটি এখানে এনে রোপন করেছি। দিন ও রাতে গাছে পানি দিয়েছি। যার কারণে গাছটি জীবিত হয়ে ঢাল-ফালা দেয়। প্রতিদিন শতশত কৃষক গাছের ছায়াতে বসছেন। এটাই আমার সফলতা। সরকারি উদ্যোগে এরকম গাছ লাগানো প্রয়োজন।

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মোঃ মাঈদুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগে। সামাজিক ও মহৎ কাজে এভাবে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।

(একে/এসপি/জুন ০৪, ২০২৩)