রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ৭ নং চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায়না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এ ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। তাদের অভিযোগ, অফিসে ভূমি খারিজ করতে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তারপরেও ঘুরতে হচ্ছে মাসের পর মাস। আর কোনমতে খারিজ পেলেও দাখিলার (খাজনা আদায়কৃত রশিদ) জন্য আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপা।

সরেজমিনে ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা মেলে মহিরামকুল গ্রামের মৃত খোকা মিয়ার ছেলে রাসেলের সাথে। প্রচণ্ড তাপদহে অফিসের সামনে তিনি ঘুরাঘুরি করছেন। তাঁর সাথে ভূমি অফিসের সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- 'এক মাস ধরে জমির খারিজের জন্য ঘুরছি। এখনও খারিজ হাতে পাইনি। আজকেও দেখা করলাম, ভূমি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপা বললেন আরও ১০/১৫ দিন লাগবে।'

খারিজ করতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- '১৫ হাজার টাকা দিয়েছি তাঁকে।'

তাঁর সাথে কথা বলতে দেখে সামনে আসেন শিহাটা গ্রামের মৃত জমশের আলী মন্ডলের ছেলে নূর আহম্মেদ। তাঁর অভিযোগ- 'জমি খারিজ করতে কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি, এখনও খারিজ পাইনি, ঘুরতে ঘুরতে আর ভালো লাগছে না। এই হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই।'

একই অভিযোগ একই গ্রামের মৃত খলিলুর রহমান মাষ্টারের ছেলে শফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন- '২ মাস আগে আমি জমি খারিজের জন্য ৬ হাজার টাকা দিয়েছি। আজ দাখিলা হাতে পেলাম। এক হাজার টাকা দিয়েছি দাখিলার জন্য, রশিদ পেয়েছি ২৮ টাকার।'

মহিরামকুল গ্রামের মৃত টিএসআই মোহাম্মদ আব্দুল রশিদের ছেলে জিহাদুল ইসলাম বলেন- 'আমি ৭ হাজার টাকা দিয়েছি। দাখিলা কাটতে দিয়েছি আরও এক হাজার টাকা। দাখিলার রশিদ পেয়েছি ৩০ টাকার।'

অনেকের অভিযোগ, এখানে আসলে বলা হয় উপজেলা ভূমি অফিসে যান, সেখানে শিফার সাথে দেখা করেন। আর খারিজ পেতে কেউ যদি জোর করে তাহলে মেলান্দহ উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারকে ডেকে এনে জেলহাজতে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, এই অফিসে মুক্তল নামের এক ব্যক্তি নিজেকে সহকারী নায়েব পরিচয় দিয়ে ভূমি অফিসের কাঁটাতারের বেড়া ভেঙ্গে ভূমি অফিসের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ফসল চাষাবাদ করে আসছেন। এছাড়াও তার বাড়িতে চলে খারিজ করে দেয়ার নামে রফাদফা। তাঁর বাড়ির উঠানে একটি বৈঠক খানাও তোলা হয়েছে। এখানেই নিয়মিত যাতায়াত করতে দেখা য়ায় ভূমি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপাকে।

অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অফিসের পুকুরটিও দখলে রেখে মাছ চাষ করছেন এই মুক্তল। ৭নং চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপা বলেন- 'এই অফিসে ভূমি খারিজ করতে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেয়া হয় না।'

(আরআর/এএস/জুন ০৫, ২০২৩)