‘ডিএনসিসির সব রাস্তা ও ফুটপাতে গাছ লাগানো হবে’
স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সব রাস্তা ও ফুটপাতে গাছ লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মেয়র আনিসুল হক সড়কে ডিএনসিসি এলাকায় দুই লাখ গাছ লাগানোর কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে গাছের চারা রোপণ করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব, গ্রিন সেভার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান রনি, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী ও আখতার হামিদ।
উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র বলেন, ডিএনসিসি এলাকার সব রাস্তা ও ফুটপাতে গাছ লাগানো হবে। কোনো জায়গা খালি রাখতে চাই না। ফুটপাতে ছাতিম, বকুল, কাঠবাদাম, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, সড়কের মিডিয়ানে কাঁটা মেহেদী, রংগন, করবী ও বাগান বিলাস, বামন জারুল, রসকাউ লাগানো হবে। আর আমাদের খালের পাশে বিভিন্ন ধরনের ফলদ গাছ, আম, জাম, কাঁঠাল ও ঔষধি গাছ লাগানো হবে।
নগরে কোনো পাখি নেই। আমরা বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে রসকাউ লাগাচ্ছি। রসকাউ ফলটা পাখিদের জন্য খুবই প্রিয়। ক্লিনিং, গ্রিনিং ও ফিডিং এ তিনটি বিবেচনায় নিয়ে গাছ লাগানো হবে।
তিনি বলেন, ‘সবুজে বাস, বারো মাস’ স্লোগানের মাধ্যমে আমারা আজ বৃক্ষরোপণ শুরু করলাম। আমি নগরবাসীকে আহ্বান করছি যার যার বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগাবেন। আমি রাজউকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রতিটি বাড়িতে এক কাঠায় অন্তত একটি গাছ এটি যেন রাজউক অবিলম্বে বাস্তবায়ন করে।
তিনি আরও বলেন, গাছ লাগানো অনেক সহজ, কিন্তু গাছ বাঁচানো অনেক কঠিন। গাছ লালন-পালন করা অনেক কঠিন। তাই গাছকে আমরা লালনের জন্য এ প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১০০ জন মালি নিয়োগ দেব। একেক জন মালিকে ১ কিলোমিটারের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এক কিলোমিটারের মধ্যে যত গাছ আছে সেসব গাছের রিপোর্ট তারা আমাদের দেবেন। আমরা একটি জিআইএস ম্যাপ তৈরি করেছি। যেটির মাধ্যমে জায়গা নির্বাচন, গাছ মনিটরিং এগুলো করা হবে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা ফুটপাতে পাঞ্চ করে ছাতিম গাছ লাগাবো। এসব গাছ ছায়া দেবে, বকুল গাছ লাগাবো ফুলের গন্ধ দেবে, কাঠবাদাম গাছ এবং যেখানে বেশি জায়গা পাবো সেখানে আমরা কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগাবো। গাছগুলো দেখাশোনার জন্য আমাদের পরিবেশ বিভাগকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আমাদের আগামী বাজেটে বৃক্ষরোপণের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
মেয়র আরও বলেন, আজ আমরা এখানে ছাতিম গাছ, বকুল গাছ ও কাঠবাদাম গাছ লাগিয়েছি। ইনশাআল্লাহ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এটার সুফল পাবে। সাতরাস্তা থেকে রেলগেট পর্যন্ত যে গাছগুলা লাগানো হবে সেই গাছের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এলাকার কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ট্রাক শ্রমিক ও মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ এ এলাকার সবার। আমি আশা করছি সবাই গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করবেন।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের নিজেদের ইচ্ছা মতো কোনো গাছ লাগানো হচ্ছে না। প্রত্যেক গাছ বন বিভাগ, পরিবেশবাদী ও নগর পরিকল্পনাবিদের পরামর্শ নিয়ে নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা যে গাছগুলো লাগাচ্ছি সেই গাছগুলোর মাধ্যমে বায়ু দূষণ কমে যাবে, এক্সট্রিম হিট কমবে, বায়োডাইভারসিটি সংরক্ষণ হবে, ভূমির ক্ষয়রোধ হবে, ছায়া দেবে এবং অর্থনৈতিকভাবে সুফল আনবে। সবচেয়ে বড় কথা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে কার্বন কালো ধোঁয়া চেয়ে গেছে তা অনেকাংশে লাঘব হবে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, গাছের বিষয়ে আমার ক্লিয়ার মেসেজ। আমি বার বার বলেছি গাছ কাটলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সড়কের বিদ্যমান গাছগুলো না কেটেই উন্নয়ন কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। আমি জানতে পেরেছি মিরপুরস্থ টেকনিক্যাল ক্রসিংয়ে সড়ক বিভাজক নির্মাণকালে অসাধু ঠিকাদার কয়েকটি গাছ কেটে ফেলেছে। যেহেতু ঠিকাদার সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অমান্য করে গাছ কেটেছে তাই তাকে ডিএনসিসিতে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন প্রকৌশলীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এ পদক্ষেপ সব ঠিকাদার ও বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য একটি কঠোর বার্তা। গাছ কেটে কোনো উন্নয়ন নয়।
সবশেষ মেয়র বলেন, নগরবাসীকে অনুরোধ করবো আমরা যে গাছগুলো লাগাবো সে গাছগুলোর মাথা ভেঙে দেবেন না। বাচ্চাকে বড় করতে যেমন সবার সহযোগিতা প্রয়োজন তেমনি গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমি নগরবাসীর সহযোগিতা চাই। আমি চাই গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কাউন্সিলরদের মধ্য প্রতিযোগিতা হবে। গাছগুলো লাগানোর পর যে ওয়ার্ড তদারকি করে সর্বোচ্চ গাছ বাঁচাবে সেটির একটি পুরস্কার দেওয়া হবে। আমরা অফিস, ইউনিভার্সিটি, হাসপাতাল, স্কুল, ক্লিনিকের সামনে গাছ লাগিয়ে দেবো, আপনারা এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ঢাকা সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক আর এস এম মনিরুল ইসলামসহ অনেকে।
(ওএস/এএস/জুন ০৬, ২০২৩)