মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মাত্র কয়েক সাপ্তাহ পরেই দেশব্যাপী পালিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। এবারের ঈদুল আযহার কোরবানীর পশুর হাটে নিজেদের সেরা গরু প্রদর্শনে এখন খামারিরা ব্যস্থ সময় পার করছেন। উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করণের মাধ্যমে মান অনুযায়ী ভাল দাম পাওয়া। উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলা সদরে ১৯৯টি গরুর খামার থাকলে বাস্তবে এর সংখ্যা এখন আগের তোলনায় অনেক বেশি। বাড়ছে এই খাতে উদ্যেক্তার সংখ্যাও। লাভজনক হওয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে অনেকে গড়ে তুলেছেন গবাদি পশুর খামার। তবে ফিড, খইলসহ খাবারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকায় উদ্যেক্তাদেও মাঝে চিন্তার ভাঁজও লক্ষ্য করা গেছে।

জেলা সদরের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রুমেল আহমদের ভাই ব্যবসায়ী শেখ বদরুল ইসলাম সুজন চলতি বছরের মার্চে নিজেদের বাড়ির পাশেই শেখ এগ্রো ফার্ম নামে দেশীয় প্রজাতির গবাদী পশুর বিশাল খামার গড়ে তুলেছেন। ওই এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে আরো বেশ কয়েকটি এগ্রো ফার্ম রয়েছে। তবে ব্যবসায়ী বদরুল ইসলাম সুজনের দাবি শখের বসে গরুর খামার করা হলেও উদ্দেশ্য মানুষের কর্মসংস্থান। খামার শুরুর পর এলাকার বেকার ১০ থেকে ১২জন যুবক এখানে কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ পেয়েছে।

বুধবার (৭ জুন) সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ওই খামারে আড়াই মণ থেকে শুরু করে সাড়ে তিন মণ ওজনের ষাঁড় রয়েছে। এগুলো সবই দেশিও প্রজাতির ষাঁড়। যার একেটির দাম পড়বে একলাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে খামারটিতে সাঁড় রয়েছে ৭০টি আর গাভি রয়েছে ১২ টি। সর্বমোট ৮২টি গরু রয়েছে পুরো খামারে। দেশীয় প্রজাতির ষাঁড় এর বাহিরে নেপালী প্রজাতির দুটি (ঘী) ষাঁড়ও রয়েছে। এগুলো বড় হলে একেকটি ষাঁড়ে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ মণ মাংশ পাওয়া যাবে বলে ধারণা উদ্যেক্তাদের। খামারটিতে থাকা ১২টি গাভি প্রতিদিন দু’বেলা ১৩২ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। যা থেকে প্রতিদিন আয় হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। খামারে ৩৫০টি গরুর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি সেডে বর্তমানে এক কোটি টাকারও বেশি গরু রয়েছে।

সেড ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বিশাল আকৃতির দেশীয় প্রজাতির ষাঁড়ের উপস্থিতি। সেডের পাশেই বিশাল ডেকচিতে খাবার তৈরির কাজে ব্যস্ত শ্রমিক রমিজ মিয়া। আলাপকালে ওই শ্রমিক জানান, গরুর যতেœ ভাল মানের খাবারের বিকল্প নেই। গো-খাদ্যের দাম অতিরিক্ত হলেও প্রতিদিন রান্না করা খাবার দিতে হয়।

খামার মালিক বদরুল ইসলাম সুজন জানান, গরুর খাবারের মূল উপাদান সবুজ ঘাঁস নিজের জমিতেই চাষ করি। সেগুলো দিয়েই খাবারের একটি বড় অংশের চাহিদা যোগান দেয়া হয়। এর বাহিরে প্রতিদিনই খইল,গোরা, ফিড, ভুষি ও চিটাসহ অন্যান্য খাবার নিয়মিত দিতে হয়। তবে খাবারের দাম অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে গরুর দামও।

তরুণ এই এই উদ্যেক্তা জানান, ঈদুল আযহায় গরুর হাটে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬০টি ষাঁড় বিক্রির প্রস্তুতির কথা। ভাল দাম পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ভারত ও মায়ানমারসহ আশপাশের দেশ থেকে চোরাই পথে গরু ঢোকানোর পথ বন্ধ ও বিদেশী গরু আমদানী বন্ধ করতে পারলে দেশীয় খামারিরা লাভমান হবে। আর যদি এটি রোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি আরো বলেন, এমনিতেই খাবারের দাম অনেক গুণ বেড়ে গেছে। বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরিও। প্রতি মাসে শ্রমিক মজুরির পিছনে ব্যয় হয় লক্ষাধিক টাকা। এর বাহিরে খাবারসহ অন্যন্য ব্যয় তো রয়েছেই।

তার দাবি মৌলভীবাজারে গরুর দুগ্ধ খামারের নতুন নতুন উদ্যেক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে মৎস ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে খুব একটা সহায়তা পাওয়া যায় না এবং তাদের এখানে কোন ঔষধও পাওয়া যায় না।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহিনুল হক বলেন, গরুর খামার দিয়ে লাভমান হতে হলে প্রথমে প্রয়োজন পরিচর্যা। সেই সাথে গরুর খাবার হিসেবে ৫০শতাংশ ঘাস নিজেই চাষ করতে হবে। শুধুমাত্র মোটতাজা করণের লক্ষ্যে বাহিরের খাবারের উপর নির্ভও করলে লাভমান হওয়া যাবেনা। এখানে যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠছে গরুর খামার। কীভাবে খামার করলে লাভমান হওয়া যাবে তার জন্য অনেকেই প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কোন নির্দশনা কিংবা পরামর্শ নিচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি।

(একে/এএস/জুন ০৭, ২০২৩)