আবীর আহাদ


আইন থাকলেও সরকারের একশ্রেণীর কর্মকর্তা তা মান্য করেন না। যেমন 'মুক্তিযোদ্ধা কোটা। যে পর্যায়ে যতটুকু আছে তা মানা হচ্ছে না। এই যে, মানা হচ্ছে না, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ও সচেতন মহল নানাভাবে প্রচারমাধ্যমে অভিযোগ করলেও, সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্যে নিশ্চয়ই সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ রয়েছে, কিন্তু দু:খজনক সত্য এই যে, সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্যে কেউ এগিয়েও আসছেন না!

আমাদের দেশের প্রশাসন উত্তরাধিকার সূত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বললে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না। ১৯৭১ সালে সর্বশ্রেণী ও পেশার অধিকাংশ লোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিলেও, সরকারী প্রশাসনের ৯৫% কর্মকর্তা-কর্মচারী পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো। উত্তরাধিকার সূত্রে সেই প্রশাসন বহাল থাকার প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এসেও একই পরিমাণ অর্থাত্ ৯৫% কর্মকর্তা-কর্মচারী মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষেই অবস্থান করছে!

মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তিযুদ্ধ- এসব শুনলে যেনো তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্য বীর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বে অর্জিত দেশে তাঁদেরই দয়া ও বদান্যতায় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি চাকরিতে আছেন, জীবনে যিনি ইউডি এসিসট্যান্ট হতে পারতেন না, তিনি হচ্ছেন সচিব, সিকিউরিটি গার্ডের যোগতার লোক হচ্ছেন ডিআইজি-আইজি, ক্যাপ্টেন যোগ্যতা লোক হচ্ছেন জেনারেল! এভাবে জীবনে যিনি যা হতে পারতেন না, তার চাইতেও আরো উচ্চস্তরের পদে যেতে পারছেন। এসব হচ্ছে ঐ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কারণে। তারা দেশটি স্বাধীন না করলে আজ যারা বড়ো বড়ো আমলা হয়েছেন, তাদেরকে ঐ পাকিস্তানিদের বুটের তলায় পিষ্ট হতে হতো। অথচ এসব বেইমান ও অকৃতজ্ঞের দল ছলেকলেকৌশলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন করেননি।

শোনা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীদের ফেল করিয়ে দিয়ে তারা এ প্রচারণা চালায় যে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মেধাবী প্রার্থী পাওয়া যায় না। কী সুন্দর যুক্তি, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নাকি মেধা বিকাশের অন্তরায়! আমি তো এমন অনেক সচিবকে জানি, যারা নিজের মাতৃভাষায় একটা সঠিক বাক্য লিখতে জানেন না। ১০টা বানানের মধ্যে ৬/৭টাই ভুল বানানে লেখেন। তাদেরও কূটকৌশলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল বা প্রয়োগ না হলেও তাদের পোষ্য কোটা ঠিকই চালু রয়েছে। তাদের অমেধাবী ছেলেমেয়ে লিখিত পরীক্ষায় ঠিকই পাশ করছে, চাকরি পাচ্ছে। তবে বিস্ময়কর এই যে, প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের চাকরি না হলেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা ঠিকই চাকরি পেয়েছে এবং পাচ্ছে! এতেই বুঝা যায়, প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমলারা কতোখানি এলার্জিতে ভুগছে!

সুতরাং, বাইরে, বিশেষ করে রাজাকার পরিবার থেকে আগত ছাত্র সমাজের মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধী তথাকথিত আন্দোলন দৃশ্যমান থাকলেও মূল উস্কানিদাতা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী আমলারা। তাদেরই চক্রান্তে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপমৃত্যু সংঘটিত হয়েছে, এটাই সত্য। আরো একটা সত্য এই যে, অর্থের বিনিময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতা-নেত্রী রাজাকার, রাজাকার শাবক, বিএনপি জামায়াত শিবির জাপা থেকে আগত হাইব্রিডদের দলে ঢুকিয়েছে। সেই তারা ও তাদের সন্তানরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিরোধী আন্দোলনে ইন্ধন যুগিয়েছে!

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।