অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ১৯৬২ সালে বয়স যখন ১৯, তরুণ এই বয়সেই বিয়ে করেছিলেন ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামের বৃদ্ধ সোহরাব হোসেন বিশ্বাস। ইচ্ছে ছিল বিয়ের পরও পড়াশোনা করার। তবে সেই সময়ে বাড়ির কাছে কোনো হাইস্কুল ছিল না। পরে ৫ থেকে ৬ মাইল দূরের ফুলহরি হাইস্কুলে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। তখন ষষ্ঠ শ্রেণির মাসিক বেতন ছিল ৪ টাকা।

পরবর্তীকালে এই স্কুলেই ৬ মাস পড়াশোনাও করেন সোহরাব হোসেন। তবে অর্থাভাবে চার মাসের বেতন বকেয়া হয়ে পড়ে। যার ফলে পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে পড়াশোনা ছেড়ে শুরু করেন তামাক সুপারির ব্যবসা।

বর্তমানে সোহরাব হোসেনের বয়স ৮০ বছর। জীবন সায়াহ্নে এসে তার ইচ্ছা হয় মৃত্যুর আগে সব ধারদেনা পরিশোধ করবেন। সে অনুযায়ী সবার বকেয়াও পরিশোধ করেছেন। একপর্যায়ে মনে পড়ে ফুলহরি হাইস্কুলে তার চার মাসের বেতন বকেয়া ছিল। ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার ছেলেবেলায় পড়াশোনা করা স্কুলে স্বশরীরে হাজির হন বৃদ্ধ সোহরাব হোসেন। রশিদ কেটে জমা দেন ৬১ বছর আগের বকেয়া বেতন।

দীর্ঘ পাঁচ যুগ পর বিদ্যালয়ের মাসিক বেতনের বকেয়া টাকা পরিশোধ করে সোহরাব হোসেনের এমন নৈতিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছে পুরো জেলাজুড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক সম্রাট হোসেন জানান, কিছু খবর শুনলে অনেক ভালো লাগে। এই খবরটি তার মতোই একটি। বৃদ্ধ বয়সে তিনি যা করে দেখালেন তা অবিশ্বাস্য ঘটনা। এমন ঘটনা নবীন-প্রবীণদের জন্য বিরাট শিক্ষণীয় ঘটনা।

ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ প্রসাদ সাহা জানান, দুপুরের দিকে একজন বয়স্ক ব্যক্তি স্কুলে উপস্থিত হয়ে নিজেকে প্রাক্তন ছাত্র বলে পরিচয় দেন। তারপর তার অভিপ্রায়ের কথা বলেন। ৮০ বছর বয়সী সোহরাব হোসেনের কাছে তৎকালীন বকেয়া বেতন হিসেবে বিদ্যালয়ের পাওনা ছিল ২৪ টাকা। ৬১ বছর পর তিনি পরিশোধ করেন ৩০০ টাকা। অফিস রুমে এসে রশিদ কেটে এই টাকা জমা দেন তিনি।

(একে/এএস/জুন ০৯, ২০২৩)