গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : ফুকরা মদন মোহন একাডেমী (এমএম একাডেমী) গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এক সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী স্বীকৃতি প্রাপ্ত এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই বাংলা তথা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দ্যুতি ছড়িয়েছে সমানভাবে। অনেক কৃতি শিক্ষার্থী এখানে পাড়াশোনা করেছেন। তারা দেশ বরেণ্য হয়েছেন। ৭১ এর মহান মুক্তিযদ্ধে বিদ্যালয়টি ছিল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বরেণ্য এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হন ফুকরা গ্রামের যুবক নেয়ামুল হাচান।

সভাপতি নির্বাচিত হয়েই তিনি অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে অযাচিতভাবে দুব্যবহার শুরু করেন। এতে অতিষ্ট হয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির ৭ সদস্য গত ২ মে সভাপতির বিরুদ্ধে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করেন। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান গত ১৪ মে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন উপস্থাপন করার জন্য গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি চিঠি দেন। গত ৩১ মে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা ম্যাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহাফুজা বেগমকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। তদন্ত কর্মকর্তা আগামীকাল রোববার (১১ জুন) তদন্ত কাজ সম্পন্ন করবেন বলে জানাগেছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও অনাস্থা প্রস্তাবকারী হাচিবুর রহমান বলেন, বয়সে তরুণ নেয়ামুল হাচান বিদ্যালয়টির ঐহিত্যের ধারবাহিকতা ঠিক রেখে শিক্ষার গুনগতমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সভপতি নির্বাচিত হয়ে সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বাজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতি করে গত কয়েক মাসে বিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠিত সততা স্টোর তিনি দখলে নিয়ে তার লোকজন দিয়ে পরিচালনা করেছন। সভাপতি হিসেবে এককভাবে বিদ্যালয় বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করেছেন। প্রতিবাদ করলেই তিনি দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে তিনি সীমাহীন দুব্যবহার করে আসছেন। এতে শতবর্ষী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই সভাপতির ওপর অতিষ্ঠ হয়ে ম্যানেজিং কমিটির ৭ সদস্য অনাস্থা দিয়েছি।

অভিযুক্ত স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নেয়ামুল হাচান বলেন, অনাস্তা প্রস্তাব ও তদন্তের বিষয়টি আমি জেনেছি। এই সংক্রান্ত কোন কাগজ আমি পাইনি। আমি তদন্ত টিমের সামনে হাজির হয়ে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করব। তবে তিনি গণমাধ্যমের কাছে দুর্নীতি,অনিয়ম, স্বাজনপ্রীতি, দুব্যবহার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কাশিয়ানী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহফুজা বেগম বলেন, ফুকরা মদন মোহন একাডেমীর সভাপতির বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির ৭ সদস্য লিখিত অনাস্থা দিয়েছে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান এটি তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। আমি দু’ পক্ষকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। দু’ পক্ষই এ সংক্রান্ত চিঠি গ্রহন করেছে। বিষয়টি রবিবার (১১ জুন) তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে বিধি মোতাবেক প্রতিবেদন দাখিল করব।

(এমএস/এএস/জুন ১০, ২০২৩)