রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের মেলান্দহে স্ত্রীর দাবি নিয়ে যুবলীগ নেতা মুজিবুল হাসান শামীম হাজারীর বাড়িতে অনশন করার সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সুমনা শেখ নামে এক নারী। স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তাঁকে ঘরে না তুললে আত্মহত্যারও হুমকি দেন তিনি।

ওই নারীর দাবি, প্রলোভন দেখিয়ে একবছর আগে মসজিদের ইমামের মাধ্যমে তাঁকে বিয়ে করেন যুবলীগ নেতা শামীম হাজারী। তারপর তাঁরা ভাড়া বাসায় একত্রে থাকতে শুরু করেন। এরমধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে বারবার তাগাদা দিলেও নানা তালবাহানা করে এড়িয়ে যান ওই নেতা। কিছুদিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ। নিরুপায় হয়ে তিনি স্ত্রীর মর্যাদা পেতে ওই নেতার বাড়িতে উঠেছেন।

অপরদিকে ওই নেতার দাবি, রাজনৈতিকভাবে তাঁকে হেয় করার উদ্দেশ্যেই সাজানো হয়েছে এসব ঘটনা।

অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মুজিবুল হাসান শামীম হাজারী মেলান্দহ উপজেলার হাজড়াবাড়ি পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি। ওই নারী একই পৌরসভার ঢালুয়াবাড়ি গ্রামের সুজন শেখের কন্যা।

সোমবার (১২ জুন) বেলা ১২টার দিকে হাজড়াবাড়ি পৌরসভার কড়ইচড়া এলাকায় যুবলীগ নেতা মুজিবুল হাসান শামীম হাজারীর বাড়িতে অনশন শুরু করেন ওই নারী।

তিনি সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, প্রায় একবছর আগে শামীম হাজারীর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ঢাকায় নিয়ে মসজিদের ইমামের মাধ্যমে বিয়ে করেন। বিয়ের পর জামালপুর পৌরসভার নতুন হাইস্কুল মোড়ে একটি ভাড়া বাসায় আমরা একত্রে থাকি। মাঝেমধ্যে তিনি চলে যেতেন আবার এসে থাকতেন। এর আগে আমার বিয়ে হয়েছিল। তাঁর কথায় আমি ওই স্বামীকে তালাক দিয়ে চলে এসেছি। এরমধ্যে আমি তাঁকে কাবিন রেজিস্ট্রির করার জন্য চাপ দিলে তিনি নানা তালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করেন। গত একমাস ধরে তিনি আমার কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না। যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। সেজন্য আমি শামীম হাজারীর বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি ঘর তালাবদ্ধ। আমার আসার খবর পেয়ে আগেই তাঁরা সবাই পালিয়ে যান। তাই আমি সেখানেই অনশন শুরু করি।

তিনি আরও জানান, আমি সোমবার সকাল ১২টার দিকে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে শামীম হাজারীর বাড়িতে এলে তাঁর চাচাতো বোন হ্যাপি ও সেতু গিয়ে আমাকে তিনতলা থেকে টেনেহিঁচড়ে বাসা থেকে বের করে দেন। তাঁরা আমাকে মারধরও করেন। শামীম হাজারী যদি এখন আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দেন তাহলে আমার আত্মহত্যা হত্যা ছাড়া কোনো পথ থাকবেনা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে শামীম হাজারী জানান, এই মেয়ের আগে দুটি বিয়ে হয়েছিল। তাঁর চাচাতো ভাই শেখ রানা আমার দোকানঘর ভাড়া নিতে চেয়েছিলেন, আমি দেইনি। সেই থেকে আমার প্রতি তাঁর ক্ষোভ। আসলে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যেই সাজানো হয়েছে এসব ঘটনা।

হাজরাবাড়ী পৌর যুবলীগের সভাপতি রোহান শাহ রেজা জানান, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। শামীম হাজারী যেহেতু পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন, যদি তিনি কোনো অনৈতিক কাজে জড়িত থাকেন এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন বাঘা বলেন, যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মত কোনো অপরাধ করে থাকে এবং তা যদি প্রমাণিত হয় তবে দল অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।

মেলান্দহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরআর/এসপি/জুন ১৩, ২০২৩)