মোহাম্মদ ইলিয়াছ


‘ছেলে আমার বড় হবে, মাকে বলত সে কথা. বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়/ কেউ বলে না তোমার মতো, কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়’ ব্যান্ডশিল্পী জেমসের গাওয়া ‘বাবা’ শিরোনামের এই গানের প্রতিটি অন্তরাতেই ফুটে উঠেছে বাবা ও সন্তানের সম্পর্কের তীব্রতা। সত্যিই তো বাবার সঙ্গে সন্তানের ‘এ তো রক্তের সাথে রক্তের টান, স্বার্থের অনেক ঊর্ধ্বে।’ সন্তানের জীবনে বাবা মানে বটবৃক্ষের ছায়া। বাবা মানে পরম নির্ভরতা। শাস্ত্রে বলা হয়, ‘পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ, পিতাই পরম তপস্যা।’ সন্তানের প্রতি পিতা বা বাবার ভালোবাসা চিরকালের।

বাবার হাত ধরেই সন্তানের প্রথম হাঁটতে শেখা, হাত ধরে বাইরের জগৎটাকে চিনতে পারা। সন্তানের কাছে বাবা বন্ধুর মতো। বাবাই সন্তানের জীবনের প্রথম পথপ্রদর্শক। সন্তানের প্রতি বাবার যেমন রয়েছে আত্মিক টান, একইভাবে বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসার টানটিও চিরন্তন।

‘পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ, পিতাই পরম তপস্যা।’ সন্তানের প্রতি পিতা বা বাবার ভালোবাসা চিরকালের।
বাবার হাত ধরেই সন্তানের প্রথম হাঁটতে শেখা, হাত ধরে বাইরের জগৎটাকে চিনতে পারা। সন্তানের কাছে বাবা বন্ধুর মতো। বাবাই সন্তানের জীবনের প্রথম পথপ্রদর্শক। সন্তানের প্রতি বাবার যেমন রয়েছে আত্মিক টান, একইভাবে বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসার টানটিও চিরন্তন। তবে যুগের পরিবর্তনে প্রকাশ ভঙ্গিতে এসেছে পরিবর্তন। মা দিবসের মতো এখন পৃথিবীর মানুষ বছরের একটি দিন বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শতকের প্রথম দশক থেকেই শুরু হয় বাবা দিবসের প্রচলন। দিবসটি আমাদের দেশে নতুন হলেও এখন অপরিচিত নয়। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ‘বাবা দিবস’।

বাবা থাকা মানে নিজের ওপর অতিরিক্ত পরিমাণ চাপ না থাকা, বাবা থাকা মানে জীবনে অনেক অনেক ঝামেলা ও সমস্যা থাকলেও নির্ভার থাকতে পারা, বাবা থাকা মানে চিন্তামুক্ত থাকতে পারা, বাবা থাকা মানে সাহসী থাকতে পারা। বাবা হলো নির্ভরতার প্রতীক। বাবা মানে বটবৃক্ষ, যার কারণে প্রখর রোদেও শীতল ছায়া পাওয়া যায়। বাবা মানে মাথার ওপর এক টুকরো ছাদ, যার কারণে আশ্রয় পাওয়া যায়।

ছোটকাল থেকে শুনে এসেছি সন্তান তার বাবাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে সেটা কখনো তেমনভাবে প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু দুইটা সময়ে একটা সন্তান বুঝতে পারে, সে তার বাবাকে কতটা ভালোবাসে - ১. বাবা না থাকা অবস্থায় কোনো বিপদে পড়লে। ২. বাবার কোনো অসুখ হলে।

ছেলে মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ গড়তে বাবারাই রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অনেক সময় নিজে না খেয়ে তার ছেলে সন্তানদের খাওয়ান।এরপর হাজারও কষ্টে একজন বাবা তার ছেলেকে সমাজের আর দশ জন মানুষের মতো মানুষ গড়তে তিনিই তার পরিশ্রমের টাকা গুলো তাদের সন্তানদের পিছনে ব্যয় করেন।

সেই শিশুকাল থেকেই এখন পর্যন্ত আমার কোনো আবদারে বাবা ‘না’ করেননি। শত কষ্ট শত অভাবের মাঝেও আমার যেকোনো বায়না, ইচ্ছা তিনি পূরণ করে দেন। আসলে বাবারা এমনই। আমার বাবা আমাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেন। আমি যাতে মানুষের মতো মানুষ হতে পারি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে একজন ভালো মানুষ, নৈতিক ও আদর্শবান মানুষ হতে পারি।

আমারও স্বপ্ন, আমারও আকাঙ্ক্ষা আমি যেন একজন ভালো মানুষ হতে পারি, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি, দেশ ও জাতির গর্বে পরিণত হতে পারি।

বাবাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। পৃথিবীর সব ধর্ম গ্রন্থেই সন্তানকে তার বাবার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। পরম দুঃখের হলেও সত্য যে, পিতার বুকফাটা আর্তনাদ না শোনার মতো সন্তানও এই সমাজে রয়েছে। আমাদের দেশে দেখা যায়- যে বয়সে একজন বাবা তার ছেলে-বৌ, নাতি-নাতনীর সাথে কাটানোর কথা জীবনের সে সময়টা তাকে কাটাতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে।

এ বিষয়ে জনপ্রিয় একটা গানের বাস্তবতা মনে পড়ে যায়- ‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার/ মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার। নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/ সবচেয়ে কমদামি ছিলাম একমাত্র আমি/ ছেলে আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম/ আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’

বাবা মায়ের জন্যই আমাদের পৃথিবীতে আশা। পৃথিবীতে হাজার কোটি খারাপ মানুষ থাকলেও একজন খারাপ বাবা নেই। বাবা রা এমনই হয়।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট) অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।