নিউজ ডেস্ক : সোমবার অভিনেত্রী-নির্মাতা ও সংগীতশিল্পী মেহের অাফরোজ শাওন তার নিজের ছোটবেলার সঙ্গে দুই পুত্র নিষাদ আর নিনিতের মিল খুঁজে পেয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। দুই ছেলে নিষাদ অার নিনিত দিনে দিনে বেড়ে উঠছে। সেটি দেখে মা হিসেবেও তিনি পুলকিত। আর এই শাওন এর জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন শিশুদের সাংস্কৃতিক বিদ্যালয় 'বাতিঘর'কে। উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ পাঠকদের জন্য শাওনের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল...


ছোটবেলায় বাসায় মেহমান আসলেই শুরু হত আমার মায়ের অত্যাচার...
মেহমানঃ ভাবি, আপনার মেয়েটা এত্ত সুন্দর গান গায়।
আম্মুঃ (মনে মনে মহাখুশি, কিন্তু মুখে বিরক্তিভাব) আর বলেন না, একদম প্র্যাকটিস করেনা...
মেহমানঃ একটু ডাকেন না ভাবি ওকে। একটা গান শুনি।
আম্মুঃ শাওন। আনটিদের ঐ গানটা শুনিয়ে দাও।
নিপীড়িত আমি শুকনা মুখ করে গান ধরতাম
"শ্যামা তন্বী আমি মেঘ বরণা
মোর দৃষ্টিতে বৃষ্টির ঝরে ঝরনাআআআআআ..."
আমার চোখে হাল্কা বৃষ্টি ঝরা ভাব দেখে আমার মা কিভাবে জানি মুখে হাসি রেখেই গরম চোখে ইশারা করত যেন আমি হাসিহাসি মুখ করে গান করি..!!!
খালি অপেক্ষা করতাম... কখন বড় হব... আর এইসব অত্যাচার বন্ধ হবে...
কারও মুখে কন্যার প্রশংসা শুনে আমার মাতার মনে যে কি ঘটতো কখনও বুঝিনি...


ইদানিংআমার বাসায় কেউ আসলে আমি আমার দুইপুত্র এবং পাশের বাড়ির কনিষ্ঠ পুত্র অন্বয়কে ডেকে দাড় করাই...
আমিঃ বাবা, সবাইকে তোমাদের নতুন গানটা শুনিয়ে দাওতো...
নিনিতঃ মা, ওয়ান তু থি বল...
আমিঃ ওয়ান টু থ্রি...
"আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে........."
নিষাদ পরিপূর্ণ মনোযোগে সঠিক উচ্চারণে গানটা করে।
নিনিত এই গানের এক লাইনও জানেনা কিন্তু বিরাট ভাব নিয়ে ঠোট নাড়ায়।
অন্বয় মুখ এমন গম্ভীর করে রাখে যেন কেউ তার পিছনে বন্দুক ধরে আছে।
আর আমার মনে হয় এমন মধুর কণ্ঠের গান বোধহয় কোনোদিন কেউ শোনেনি...
আমি আমার সেই ছোট্টবেলায় ফিরে যাই...


মাস ছয়েক আগে আমার এক বন্ধু Nill Nilima তার একটি স্বপ্নের কথা আমাকে বলল। সে বাচ্চাদের জন্য একটা সাংস্কৃতিক বিদ্যালয় করতে চায়। সেখানে সে কি কি শেখাতে চায় আমাকে বললেও সেটা আমি তার মত গুছিয়ে বলতে পারবনা। তার শুধু একটি কথায় আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

"আমি চাই বাচ্চাগুলো যখন জাতীয় সঙ্গীতের ঐ লাইনটি গাইবে 'মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়নজলে ভাসি' তখন যেন তারা অনুভব করে যে বাংলা মায়ের মুখ কখনও মলিন হতে দেয়া যাবেনা। এই লাইনটা গাওয়ার সময় যেন তাদের চোখে বাংলা মায়ের জন্য একফোঁটা জল থাকে।"

শুরু হল বাতিঘর এর যাত্রা... সঙ্গী হল আমার রাজপুত্ররা...
আমি অবাক হয়ে আমার নিষাদের গান গাওয়া দেখতে লাগলাম...
কি সুন্দর করেই না সে মাটি দিয়ে পাখির বাসা বানানো শিখল...
একদিন বাতিঘর থেকে ফিরে বাসার রান্নার মেয়েটিকে খুব গুছিয়ে শহিদ জননী জাহানারা ইমাম এর গল্পও বলল... আমি মুগ্ধ হয়ে পাশের ঘর থেকে শুনলাম...

ধন্যবাদ বাতিঘর... আমার মায়ের অনুভূতিগুলো আমাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য... আমাকে আমার শৈশবে ঘুরিয়ে নিয়ে আসার জন্য...

উল্লেখ, 'বাতিঘর শিশুদের সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়'। চার থেকে ষোল বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে সপ্তাহে দু’দিন তাদের ক্লাস। তাদের বিষয়সমূহ :

*সঙ্গীত
*নৃত্য
*চারু ও কারুকলা
*পাঠ ও আবৃত্তি (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পরিচয়, বাংলা উচ্চারণ, গদ্য ও কবিতা আবৃত্তি, একক ও
দলীয় পরিবেশনা, কথ্য ভাষার অনুশীলন)
*যুক্তি কথা (যুক্তি বিবেচনা ও মননশীলতা, যুক্তি নির্মাণ ও খণ্ডন, তত্ত্ব ও তথ্য ধারণা, বক্তৃতা,
বিতর্ক, সাধারণ জ্ঞান)
*বিশ্ব পরিচয় (বাংলাদেশ ও বাঙালির পরিচয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
পরিচয়, পৃথিবীর অমর ব্যক্তিত্বদের জীবনী ও অবিস্মরণীয় কীর্তি, বিজ্ঞান ও পরিবেশ
সচেতনতা, মানুষ এলো কেমন করে, সভ্যতার ইতিহাস, সমকালীন বিশ্ব)

ক্লাসের সময় : প্রতি শুক্র ও শনিবার, বিকেল ৪টা থেকে ৬টা।
স্থান : ৫/৭, ব্লক-ই, লালমাটিয়া, ঢাকা।
ফোন : ০১৬২৪৮০৪০৪৮, ০১৭৬৭৮৪৫৮৭৩।

(ওএস/অ/অক্টোবর ২৮, ২০১৪)